৩ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫১

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়

বিধিভঙ্গের কথা স্বীকার, সিইসির একক কর্তৃত্বের অবসান!

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকাণ্ড প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য কারোর একক সিদ্ধান্তে হবে না, অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মতও নিতে হবে। কমিশন সচিবালয়ের অনেক বিষয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সব নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হয় না—এই অভিযোগ ওঠার পর ইসি সচিবালয় এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সেই সঙ্গে স্বীকার করা হয়, এত দিন বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে। সম্প্রতি চার নির্বাচন কমিশনার ‘আন-অফিশিয়াল’ নোট দেওয়ার পর কমিশন নড়েচড়ে বসল।
গত ১ অক্টোবর ইসি সচিবালয়ের সংস্থাপন-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ইসি সচিবালয়ের এবং মাঠপর্যায়ের সব নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কিছু কিছু কার্যক্রমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন-২০০৯ এবং নির্বাচন কমিশন (কার্যপ্রণালী) বিধিমালা, ২০১০-এর বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে; যা চারজন নির্বাচন কমিশনারের নজরে এসেছে। এসংক্রান্ত বিধিবিধান প্রতিপালন করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছেন।’
গত ২০ সেপ্টেম্বর চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইসি সচিবকে দেওয়া তাঁদের আন-অফিশিয়াল (ইউও) নোটে বলেন, সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইসি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে ইসি সচিবালয় আইন ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। ইসি সচিবালয় আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকল্পে নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনি ও বিধির যথাযথ বাস্তবায়নে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী ইসি সচিবালয় কমিশনের প্রয়োজনীয় সব সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এবং ইসি কর্তৃক এর ওপর আরোপিত অন্যান্য যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদন করবে। আইনের ৫ ধারায় সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সচিব সচিবালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হবেন বলে উল্লেখ করা হলেও ইসি সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ একক কোনো ব্যক্তির নিকট ন্যস্ত করা হয়নি। আইনের ১৪ (১) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সচিবালয়ের দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নিকট দায়ী থাকবেন।

নোটে বলা হয়, আইনের ১৪ (২) ধারায় সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে সচিবের নিকট দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ থাকলেও একক নিয়ন্ত্রণে সচিবালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা, কমিশনের সদস্য অন্য কমিশনারদেরকে অবহিত করা হয় না। নোটে আরো বলা হয়, ১৬ ধারায় সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেটে নির্ধারিত খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় অনুমোদনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবে বলে বিধান থাকা সত্ত্বেও বিষয়গুলো কখনোই কমিশনের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়নি।

নোটে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালার ৩ বিধির উপবিধি ৫-এ কমিশনের কাছে উপস্থাপিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির উল্লেখ করা হয়েছে। যে পদ্ধতিতেই নিষ্পত্তি করা হোক না কেন বিধির ৪(৪) উপবিধি মতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়াদি নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। নোটে আরো বলা হয়, বিধি ২-এর উপবিধি ৫-এ নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত বিষয়াদির তফসিল দেওয়া হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী সেসব বিষয়ের অনেক ক্ষেত্রেই কমিশনের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হয় না। যেমন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট জনবলের প্রশিক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রম যথা দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালাসংক্রান্ত। এ ছাড়া বলা হয়, নির্বাচন সচিবালয় আইন এবং এসংক্রান্ত বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সচিবালয়ের কার্য সম্পাদন আইন ও বিধির পরিপন্থী।

এর আগে গত বছর ১১ জুলাই প্রায় একই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এক ইউও নোটের মাধ্যমে তাঁকে না জানিয়ে ৩৩ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করার বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। মাহবুব তালুকদার নোটে প্রশ্ন রাখেন, “গত ১২ জুন আমাকে সভাপতি করে ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ নামে যে কমিটি গঠিত হয়েছে, উল্লিখিত বদলি বা পদোন্নতি তার আওতায় পড়ে কি না।” বিষয়টি ভালোভাবে নেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। গত বছর ১৭ জুলাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি মাহবুব তালুকদারের প্রতি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি আমাদের উত্ত্যক্ত করছেন।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/10/03/687008