২ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৬

এত খারাপ আইন বিশ্বের আর কোথাও নেই : ডা: জাফরুল্লাহ

বিএফইউজে ও ডিইউজের প্রতীকী অনশন

সরকার ভয় পেয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর কথায় সরকার এ আইন করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। এত খারাপ আইন বিশ্বের আর কোথাও নেই। অবিলম্বে এ আইন বাতিল করা উচিত।

‘গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে তিনি এ কথা বলেন। বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরো বক্তৃতা করেন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম এ আজিজ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহমদ মতিউর রহমান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বর্তমান যুগ্ম-সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল আমিন রোকন, সহসভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সাবেক সহসভাপতি ছড়াকার আবু সালেহ, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাবেক সভাপতি এ কে এম মহসীন, দিগন্ত টিভির উপনির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান মঞ্জু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সাংবাদিক কামরুজ্জামান কাজল, কাফি কামাল, কবি রফিক হাসান, আমিরুল ইসলাম অমর প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিইউজের দফতর সম্পাদক শাহজাহান সাজু।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকার সর্বত্র ভূত দেখছে। তথ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে তারা আইন করছে। পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংক সাত হাজার কোটি টাকায় করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ আইন হলে এত খরচ কেন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠানো যাবে না। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা ভুল করলে এ জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে। সেটাকে প্রয়োজনে আরো শক্তিশালী করুন। কিন্তু কথা বলতে দিবেন না তা হয় না। প্রধানমন্ত্রী বিদেশের মাটিতে সংবাদ সম্মেলনে কী বলেছেন তা আমরা ভুলে যেতে চাই, আমরা আশা করি তিনি দেশে ফিরে এ আইন বাতিল করবেন। কারণ তিনি তার পিতার ভুলের পুনরাবৃত্তি করুন তা আমরা চাই না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিলের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইতিহাসের জঘন্যতম আইন। এ আইন বাক, ব্যক্তিস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। এ আইনের ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন পিআইবির হ্যান্ডআউট ছাপানো ছাড়া সাংবাদিকদের আর কোনো কাজ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, যারা এ আইনের পক্ষে বলবেন তারাই রাজাকার। আর যারা বিরোধিতা করবেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, সম্পাদক পরিষদ এ আইনের বিরোধিতা করায় ধন্যবাদ জানাই। তারা এর বিরুদ্ধে রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার মিটিংয়ের নাটক করে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তবে সাংবাদিকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যত দিন এ আইন বাতিল না হবে তত দিন আন্দোলন চলবেই। আগামী ৬ অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
এম এ আজিজ বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের বক্তব্যের পর বোঝা যায় এ আইন পরিবর্তন হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন হলে পত্রিকা সরকারের বন্ধ করা লাগবে না, এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই এ আইন বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না।
ডা: জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এক সাথে চলতে পারে না। যতবারই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা পত্রিকা ও চ্যানেল বন্ধ করেছে। সাংবাদিকদের নানাভাবে নির্যাতন করেছে। এখন আবার নতুন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইন করে সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এত জঘন্য যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাংবাদিকরাও এ আইনের বিরোধিতা করছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন আজ এই আইনের বিরুদ্ধে। তারপরও সরকার গায়ের জোরে এ আইন বাস্তবায়ন করছে। এ আইন গণবিরোধী ও সংবিধান পরিপন্থী। অবিলম্বে এ আইন বাতিল করতে হবে। তা নাহলে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এ আইন বাতিল করতে বাধ্য করা হবে।
আহমদ মতিউর রহমান বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বন্ধ করতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। যাতে মানুষের সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি জানতে না পারে। তিনি আরো বলেন, সরকার বৈঠকের নামে টালবাহানা করছে। তাদের ছলচাতুরী ধরা পড়ে গেছে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, পেশাদার সাংবাদিকদের এই পেশায় টিকে থাকতে হলে এই কালো আইনের বিলোপ ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, এ আইন সাংবাদিক সমাজ মানে না। এই কালো আইন বাতিলের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি। বিজয় নিশ্চিত করেই আমরা ঘরে ফিরব।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/353699