২ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৪

পল্লীর রাস্তাতেও পরামর্শক খরচ ২৯৩ কোটি টাকা

নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামীণ অবকাঠামো ও রাস্তা উন্নয়নের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামে বড় অঙ্কের প্রকল্প একের পর এক অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। আর এসব প্রকল্পের কিলোমিটার প্রতি ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের এই বাংলাদেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক নির্মাণেও পরামর্শক খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। গ্রামের রাস্তা নির্মাণে ২৯৩ কোটি টাকাই যাবে পরামর্শকদের পেছনে। এর আগে রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইম্প্রুভমেন্ট নামের একটি চলামান প্রকল্পে একই খাতে ১৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে। আর রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার এক কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ ব্যয়ের সাথে গ্রামের রাস্তার উন্নয়ন ব্যয়ের তফাত মাত্র ২০ লাখ টাকা। সম্প্রতি একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ের রুরাল কানেকটিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণ নেয়ার কথা। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর এডিবির সাথে সরকারের চুক্তি হওয়ার কথা বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জানা গেছে।

প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে বলা হয়েছে, উপকূলীয় ১৩ জেলার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামীণ সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমকে সহায়তা দিতে এডিবির অর্থায়নে একটি কর্মসূচি নেয়া হয়। সেটার প্রস্তুতির জন্য এডিবি ২০ লাখ ডলার প্রকল্প ডিজাইন অগ্রিম ঋণ প্রদানে ২০১৬তে অনুমোদন দেয়। পরে মূল ১৩ জেলার সাথে এডিবির সহায়তায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত টেকসই গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ২১ জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্বাসনে এডিবি প্রদেয় ১০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি হয়। যাতে নামকরণ করা হয় রুরাল কানেকটিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্প। সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রকল্পটি।
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, অন্যান্য গ্রামীণ বিশেষ করে উপজেলা ও ইউনিয়নপর্যায়ে সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয় ৭০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু এই প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে উপজেলায় ব্যয় হবে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং ইউনিয়নে প্রতি কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এখানে এক ধরনের চলমান প্রকল্পের তুলনায় ব্যয় বাড়ছে ২০ লাখ টাকার বেশি। টাঙ্গাইল জেলায় কয়েকটি সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু একই সময়ে চলমান প্রকল্পে বরগুনা জেলাতে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ময়মনসিংহ জোনে প্রতি কিলোমিটার ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই হাজার ২১০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এক কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে এক কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। আর ৪৯৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখানে এক কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যেখানে ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি প্রকল্পেই মূলত পরামর্শক খাতে বড় অঙ্কের ব্যয় হয়। এছাড়া মেগা প্রকল্পে যেখানে বিদেশীদের অংশ থাকে সেখানেও পরামর্শক থাকেন কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে। কিন্তু গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে পরামর্শকদের পেছনে, যা দিয়ে একটি বড় প্রকল্প নেয়া সম্ভব। এখানে চার শ্রেণীর পরামর্শক নেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক পরামর্শকদের পেছনে যাবে ৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদনের পরামর্শক খাতে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। দক্ষতা উন্নয়ন পরামর্শক খাতে বরাদ্দ ৬৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর দক্ষতা উন্নয়ন পরামর্শক খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। সরেজমিন গিয়ে প্রকল্প পরিদর্শনে দেখা যায়, বাজার দরের সাথে ব্যয় প্রাক্কলনে অনেক ফারাক। বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় অন্যান্য প্রকল্পের সাথে সঙ্গতি রেখে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/353708