১ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১০:২৯

৯ মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৪১৩

দেশে গত ৯ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪১৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ মে থেকে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের জেরে নিহত হয়েছেন ২৬০ জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আসক বলেছে, প্রতিটি ব্যক্তির বেঁচে থাকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিগত ৯ মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

আসক তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে বলেছে, গত ২৬ মে টেকনাফে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো: একরামুল হক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। পরে ৩১ মে তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে একটি অডিও কিপ প্রকাশ করে। যা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে আরো বিতর্কের সৃষ্টি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও বন্দুকযুদ্ধে ৪১৩ জন মারা গেছেন। গত ৪ মে র্যা ব দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে। তবে ১৫ মে থেকে মাদক নির্মূল অভিযানে হার্ডলাইনে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অভিযানে ১৫ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মারা যায় ২৬০ জন। এর মধ্যে র্যা বের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ১২২ জন, পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৮৪ জন, ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৪ জন, নৌপুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন, র্যা ব ও বিজিবির সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’ তিনজন, পুলিশের নির্যাতনে তিনজন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে দুইজন, পুলিশের গুলিতে চারজন, ডিবি পুলিশের গুলিতে তিনজন, আনসারের গুলিতে একজন মারা যায়।

আসকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, থানা হাজতে আত্মহত্যা করেছেন তিনজন। গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৩৩ জনের। পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে তিনজন, র্যা ব হেফাজতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে আরো দুইজন।
আসক বলছে, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা ২১ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে দুইজন ফেরত এসেছে পরিবারের কাছে। ১০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আটকের এসব অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করে।
এ বছর বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের আটক, গ্রেফতার ও গোয়েন্দা দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি তাদের অনেককে কারাগারে যেতে হয়েছে। এই আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে অনেক সাংবাদিক মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।

মানবাধিকারের মূলনীতি ও নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে আসক বলেছে, গত ৯ মাসে দেশে ১৯৪টি রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে ২০ জন নিহত এবং দুই হাজার ৬০৯ জন আহত হয়েছেন। গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৩৬ জন। কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৬২ জন।
এ সময়ে নারী নির্যাতনেরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৯৫ জন নারী। তাদের মধ্যে চারজন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছয়জন পুরুষ ও একজন নারী নিহত হয়েছেন। হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৪২ জন নারী-পুরুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬১৬ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৪ নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন চারজন নারী। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তিন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। ৯০ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১০ জন নারী। এর মধ্যে ২২১ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে ৪৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৫ নারী। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৭০ জন নারী। এ কারণে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জনকে। আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী। ৪১ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ৯জনের। ২১ জন নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চার নারী।
এ ছাড়া গত নয় মাসে ১ হাজার ২৬৯ জন শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২১৯ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ৮৮ শিশু আত্মহত্যা করেছে। নিখোঁজের পর ১৩ শিশু এবং বিভিন্ন সময়ে ৭১ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/353414