১ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১০:২৮

নির্বাচনের আগে জনতুষ্টির প্রকল্প


চার নদী ড্রেজিংয়ে ৪৩৭১ কোটি টাকা; গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩৬৬৮ কোটি টাকা; গাজীপুর সিটির রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাথের জন্য ৬৭২১ কোটি টাকা

আগামী জানুয়ারি নাগাদ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অক্টোবরেই হবে নির্বাচনকালীন ছোট মন্ত্রিসভা। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে। ভোটের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এমনই সময়ে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে মাঠপর্যায়ে অর্থ সরবরাহের জন্য বড় বড় অঙ্কের অর্থ অনুমোদন দিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসব প্রকল্পের অর্থ অপচয় হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিগগিরই চার হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং তিন হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের দু’টি বড় প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। ছয় হাজাার ৭২১ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জন্য দু’টি প্রকল্প এখন পরিকল্পনা কমিশনের টেবিলে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এসব প্রকল্প থেকে কোনো সুফল দেশের মানুষ পাবে না। বরং এসব রাষ্ট্রীয় অর্থ ও ঋণের টাকা কিছু মানুষের পকেটে যাবে। এসব প্রকল্পে কি হচ্ছে তা আগামী তিন-চার মাস দেখার কেউ থাকবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শতাধিক প্রকল্প শিগগিরই পর্যায়ক্রমে অনুমোদন পাবে। আর এসবের বেশির ভাগই রাস্তাঘাট, গ্রামীণ সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি প্রকল্প। যেহেতু সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর, ফলে তাদের মাধ্যমেই এসব প্রকল্পের অর্থ ব্যয় হবে। আবার চলমান কিছু কিছু প্রকল্পের সময় বাড়ানো ও ব্যয় বৃদ্ধিও করা হচ্ছে ঠিক একই মুহূর্তে।

চার হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। এ নদীগুলো হলোÑ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা। তিন মিটার গভীরতা করার জন্য ২২৭ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর। ধরলা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার ড্রেজিং করে ২ মিটার গভীরতা বাড়ানো হবে। তুলাই নদীতে দেড় মিটার নাব্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ৭০ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। আর পুনর্ভবা নদীর দুই মিটার গভীরতা বাড়ানোর জন্য ৮০ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। বেসরকারি ড্রেজার ও বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করা হবে। প্রতি কিলোমিটার ড্রেজিংয়ে ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকার বেশি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে তিন হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে রুরাল কানেক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পও এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৪৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রকল্পটি এ বছর অনুমোদন নিয়ে ২০২৩ সালে সমাপ্ত করার কথা বলা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে এক কোটি ১২ লাখ টাকা। এ কার্যক্রম ৩৪ জেলার ১৮০টি উপজেলায় নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটির কয়েকটি ওয়ার্ডের রাস্তা উন্নয়নের জন্য দুই হাজার ৮৬০ কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পের আওতায় ২১৫.৯৮ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং রাস্তা ২৬.২৭ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা, সিসির মাধ্যমে ২.৩৮ কিলেমিটার রাস্তা, এইচবিবির মাধ্যমে ৪.১০ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১৮৫ কিলোমিটার ফুটপাথ ও ড্রেন আর ৪.৭৫ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল করা হবে।

সংশ্লিøষ্ট সূত্র ও একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়, যার ব্যয় আট হাজার ১৪৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সারা দেশে পল্লী অবকাঠামোর উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প চলমান থাকা সত্ত্বেও আবারো তিনটি বিভাগের জন্য আলাদা তিনটি প্রকল্প নেয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) চলতি বছর এসব প্রকল্পের কাজ শুরু করে আগামী পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার ল্য নির্ধারণ করেছে। তিন প্রকল্পের মাধ্যমে ওই তিন বিভাগে ১০ হাজার ১১৭ কিলোমিটার বিভিন্ন ধরনের রাস্তার উন্নয়ন ও সংস্কার করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, নির্বাচনের আগে এসব বড় ব্যয়ের প্রকল্প যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণের জন্য হয় তাহলে অবশ্য ভালো। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকল্পের টাকা যদি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে চলে যায় তাহলে জনতুষ্টি হবে না। আর এ রকমটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ এ সময় নজরদারি তেমন একটা জোরালো থাকে না।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/353421