১ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার, ১০:২৩

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুরবস্থা নিয়ে আজ আইএমএফের মুখোমুখি হচ্ছে সরকার

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুরবস্থা নিয়ে আইএমএফের মুখোমুখি হচ্ছে সরকার। এ জন্য আজ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের আসাদুল ইসলাম নেতৃত্ব দেবেন। অন্য দিকে আইএমএফের পক্ষে থাকবেন সংস্থাটির স্টাফ মিশন কর্মকর্তা ডাইসাকু কিহারা। কিহারার নেতৃত্বে এই টিম গতকাল বাংলাদেশে এসেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের সাথে আজকের বৈঠকের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পারফরম্যান্স ও পুনঃঅর্থায়ন পরিকল্পনা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিবেদনে রয়েছেÑ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পারফরম্যান্স, মূলধন পর্যাপ্ততা, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (সঞ্চিতি) ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকগুলোর পরিচালনগত মুনাফা, ঋণ অবলোপন এবং খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতিসংক্রান্ত তথ্য।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি সম্পর্কে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুনের শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণের ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। জনতা ব্যাংকে ছিল ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, অগ্রণীতে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, রূপালীতে ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকে ৫৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ছিল ৫৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তেজি রাখতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো গত বছর এবং চলতি বছরের প্রথমার্ধে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। নরমাল ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কম রেটে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোকে ঋণ দেয়া এবং চার্জ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক খাতে অংশগ্রহণের মতো কাজও করছে।
প্রতিবেদনে সরকারি ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত বছর চারটি সরকারি ব্যাংক মূলধন পর্যাপ্ত পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ঝুঁকিভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধন হার (সিআরএআর) সোনালী ব্যাংক ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ রেখেছে। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে রূপালী এবং বেসিক ব্যাংক পর্যাপ্ত পরিমাণ সিআরএআর রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংক দু’টির সিআরএআর হলো যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও (-) ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংককে এক হাজার ৯০০ কোটি, জনতা ব্যাংককে এক হাজার ১০০, অগ্রণীকে ৮০০, রূপালীকে ৬০০ এবং বেসিক ব্যাংককে ৭১৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে সরকারি ব্যাংকের পুনর্মূলধন পরিকল্পনার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে তা বলা হয়েছে। এতে দেখা যায় গত ৫ অর্থবছরে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দিয়েছে। তবে গত অর্থবছর রূপালী এবং জনতা ব্যাংক যেহেতু ১০ শতাংশের বেশি সিআরএআর সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তাই তাদের কোনো অর্থ দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংক ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ছেড়েছে। আর মূলধন ঘাটতি পূরণে জনতা ব্যাংকও ৮০০ কোটি টাকার বন্ড বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আইএমএফের সাথে বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এসব বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরবে। এ ছাড়া সংস্থার পক্ষ থেকে নতুন সরকার অর্থনৈতিক ঝুঁকি জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কারণে অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে আইএমএফের প্রশ্ন রয়েছে। বৈঠকে এসব বিষয়েও উত্তর দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে আজকের বৈঠকে ব্যাংকিং খাতই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। নাজুক ব্যাংক ঠিক করতে সরকার কি পদক্ষেপ নেবে, নাজুক ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ হবে কি না, ব্যাংকিং কমিশন গঠন করবে কি না, কমিশন গঠন না করলে বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে আইএমএফের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। আইএমএফের এই টিম বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় একটি বিবৃতি দিয়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকায়। জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ যুক্ত হয়েছে খেলাপি হিসেবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের এক লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/353422