৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:২৩

হজে থেকেও আসামি

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে গায়েবি ঘটনাস্থল উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এছাড়া মাজাহারুল ইসলাম সফু নামের এক বিএনপি নেতা পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কায় থেকেও মামলা থেকে রেহাই পাননি, তাকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

জানা যায়, জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই কোমল কুমার সাহা বাদী হয়ে গত ১৭ই আগস্ট স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৬ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার ৩৯নং আসামি ‘মো. মাজাহারুল ইসলাম প্রকাশ সফু (৪০), পিং- মাস্টার মমতাজুর রহমান, সাং- তুলাগাঁও, থানা- নাঙ্গলকোট’ কুমিল্লা। মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয় সদর দক্ষিণ উপজেলার ‘শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কোণা’। জানা গেছে, সদর দক্ষিণ উপজেলায় শাসনপাড়া নামে কোনো গ্রাম নেই, তবে এই নামে লালমাই উপজেলায় একটি গ্রাম রয়েছে এবং ওই গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এছাড়া এ মামলায় মাজাহারুল ইসলাম সফুকে আসামিভুক্ত করা হলেও তিনি মামলায় উল্লিখিত ঘটনার ৫৮ দিন আগে হজ্বে গেছেন এবং ফিরেছেন মামলায় উল্লিখিত ঘটনার ২৪ দিন পর।


এদিকে ওই মামলার ঘটনাস্থল এবং হজ্বে যাওয়া মাজাহারুল ইসলাম সফুর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান এবং শাসনপাড়া গ্রামের লোকজন জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।’ গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের লোকজন জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও এই নামে বিদ্যালয়ের মাঠের কোণে গায়েবী ঘটনাস্থল দেখিয়ে মামলা দায়ের করে হয়রানী করা হচ্ছে।’ মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মোতালেব মজুমদার জানান, আমরা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করে বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। ওই তালিকায় শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।

তাই মামলায় উল্লিখিত ওই ঘটনাস্থলকে গায়েবী ঘটনাস্থল হিসেবে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, নাঙ্গলকোট উপজেলার মক্রবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম সফু পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য গত ২১শে জুলাই মক্কায় গেছেন, দেশে ফিরেছেন ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তাকে এ মামলার ৩৯নং আসামি করা হয়েছে। আদালতে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমানাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানীর উদ্দেশ্যে গায়েবি ঘটনা, ঘটনাস্থল ও মিথ্যা অভিযোগে যেভাবে একের পর এক মামলা সৃষ্টি করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর আমার পিতার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীরা আসার পথে ১৯ জনকে ধরে নিয়ে ৪৬ জনের নামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দেয়া হয়েছে।

এ ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার আতংকে নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর দিনাতিপাত করছে। হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবি জানান। এ বিষয়ে মামলার বাদী এসআই কোমল কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, সংঘটিত ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের নাম ভুল হয়েছে। এ মামলার কোনো আসামি হজ্বে ছিল কি-না তা জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা মামলায় দোষীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=137952