৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:০৮

রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব শেয়ারবাজারে

রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের শেয়ারবাজারে সংকট চলছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় বাজারে দরপতন হচ্ছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সঙ্গে শেয়ারবাজার ওঠা-নামা করছে। তবে এরপরও বাজারে ছোট ও দুর্বল মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম সীমাহীনভাবে বাড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারের মূল্যস্তর অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিুমুখী রয়েছে। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীদের হাতে বিনিয়োগযোগ্য টাকা রয়েছে। কিন্তু বাজারের মূল সমস্যা আস্থা সংকট। আর এ সংকট দূর হলে বাজার ইতিবাচক হবে। আর দুর্বল কোম্পানির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে গত এক সপ্তাহে ১০টি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে নর্দান জুট মেন্যু ফ্যাকচারিং এবং ইভেন্স টেক্সটাইল বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

বাজার পরিস্থিতি : আগামী ডিসেম্বরেই দেশে জাতীয় নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে দুই জোটের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এরপর থেকে বাজারে দরপতন শুরু হয়। আর গত ৬ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে মূল্যসূচক কমেছে ১৬৩ পয়েন্ট। একইভাবে কমছে লেনদেন। সূচক দুই দিন বৃদ্ধির পর আবার বড় ধরনের পতন আসবে, এ আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ দীর্ঘ মেয়াদে বাজার স্থিতিশীল হবে- বিনিয়োগকারীদের এ আস্থা নেই।
দুর্বল কোম্পানির দাম বাড়ছে : গত এক সপ্তাহে ডিএসইতে যে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে তার মধ্যে বেশ কিছু দুর্বল মৌলভিত্তির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হল- ফাইন ফুড, ইনটেক, এসকে স্ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অন্যতম। এছাড়া অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে স্ট্যাইল ক্র্যাস্ট। প্রতিষ্ঠানটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের সর্বশেষ বাজারমূল্য ছিল ৪ হাজার টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়ন : অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার একেবারে অসুস্থ। কারণ দুর্বল জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দাম বাড়লেও মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ শেয়ারের দাম বাড়ছে না। এটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য কাম্য নয়। তিনি বলেন, রাজনীতি অসুস্থ, অর্থনীতি অসুস্থ সেখানে শেয়ারবাজার ভালো থাকতে পারে না। তারমতে, বাজারে বর্তমানে গ্যাম্বলিং হচ্ছে। গ্যাম্বলার যা চাইছে, ওই শেয়ারের দাম বাড়ছে, তারা চাইলে দাম কমছে। আবু আহমেদ বলেন, বাজার আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হলে বাজার ঠিক হবে না। তবে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার ঘোষণা এলেই এ বাজার আর ধরে রাখা যাবে না।
আর রাজনৈতিক সংকট না কাটলে বাজারে আরও পতন হবে বলে মনে করেন তিনি। অর্থনীতিবিদ ড. বাকী খলীলী যুগান্তরকে বলেন, বাজার একটু বাড়লেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ তারা খুব কম লাভে শেয়ার বিক্রি করছেন। এটাকে এক ধরনের আস্থার সংকট বলা যায়।
আবার স্বাভাবিক আচরণও বলা যায়। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যেও দুর্বল কিছু কোম্পানি নিয়ে খেলা হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/95603