৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:০২

আগামী নির্বাচনের খরচ ৬শ’ কোটি টাকা

গত পাঁচ বছরে নির্বাচন কমিশনের বাজেট বেড়েছে ১০০ শতাংশ

প্রতিবছরই বাড়ছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বাজেট। নির্বাচন কমিশন সংস্কার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার, সির্বাচনী কর্মকাণ্ড বাড়ার কারণে এ খাতে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় জাতীয় নির্বাচনে। এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনী উপকরণের দাম বাড়ায় এবং নির্বাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব খাতেই এবার খরচ বাড়বে। এসব কারণে নির্বাচনী বছরে অর্থ বরাদ্দও বেশি থাকে কমিশনের নামে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান কার্যক্রম পরিচালনায় এ বছর ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন খাতে ব্যয় ২১০ কোটি টাকা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দের তুলনায় বেশি ৯৪২ কোটি টাকা এবং বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় এ বরাদ্দ বেড়েছে এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। তবে এ বরাদ্দের বাইরে বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি। এটি সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই অর্থের চেয়েও আরও বেশি ব্যয় হবে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। যে কারণে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও অর্থ চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে চাহিদা অনুযায়ী অর্থের জোগান দেয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি নির্দেশনা দেয়া আছে। ওই আলোকে কমিশন চাইলে অর্থের জোগান পেয়ে যাবে।
জানা গেছে, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে বরাদ্দ ছিল (২০১৩-২০১৪ অর্থবছর) ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। এতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা ও উপজেলা পরিষদের জন্য সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের বাজেট ছিল ৯৫৩ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের বাজেট ছিল ৮০১ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ইসির বরাদ্দ দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ইসির বরাদ্দ ছিল ৮৪৯ কোটি টাকা।
বরাদ্দের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারই প্রথম নির্বাচন খাতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের কারণেই এ খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বাজেটে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে বরাদ্দের অর্থের মাধ্যমে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের সাধারণ ও উপনির্বাচন, উন্নতমানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই অব্যাহত এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কার্যক্রম খাতে ব্যয় হবে।

এ ছাড়া নির্বাচনী সব ধরনের উপকরণের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে কাগজের দাম ও মুদ্রণ খরচ বাড়ার কারণে ব্যালট পেপার ও অন্যান্য কাগজপত্র ছাপানো খরচ বেড়ে গেছে। অমোচনীয় কালি আমদানি, বুথ স্থাপন, নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্টদের খরচও বেড়েছে এবার।

ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে পাঁচ বছর পর পর সংসদ নির্বাচনের ব্যয়ও বাড়ছে চক্রাকার হারে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের বাজেট ছিল প্রায় ৭৩ কোটি টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই বাজেট প্রায় ১৬৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। তবে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ১৪৬ আসনে, বাকিগুলো অর্থাৎ ১৫৪ আসনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বি^তায়। এ নির্বাচনের ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৩০০ কোটি, যার মধ্যে ব্যয় হয় ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয় ১৪৭ কোটি টাকা এবং ১৪৪ কোটি ৫১ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। এবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেট বাড়ার প্রধান কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ বছর ডিসেম্বরে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এর পরপরই অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। ইতিমধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শেষ হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৭৫ কোটি টাকা বাজেটের জন্য সুপারিশ করেছিল। এ ছাড়া কমিশন আরও ৬০৩ কোটি টাকা চেয়েছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য।
জানা গেছে, দেশে ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখের মতো। এতে ৪০ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখের মতো লোক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে।

ইসির তথ্যমতে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের খাত ধরা হয়েছে ২৯টি। তবে নির্বাচন পরিচালনা খাতের খতিয়ান বড় হলেও সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। খাতওয়ারী অর্থ বরাদ্দের হার বিগত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ বা অনেক ক্ষেত্রে তিনগুণ ও চারগুণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য খাতগুলো হচ্ছে, নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার), স্থায়ী ও অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র স্থাপন, প্রতি কেন্দ্রের মনিহারি দ্রব্য, মালামাল পরিবহন খাত, রিটার্নিং অফিসারের ডাক, ফ্যাক্স ও আপ্যায়ন খরচ, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের ডাক, ফ্যাক্স ও আপ্যায়ন খরচ, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের যাতায়াত বাবদ ব্যয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় তার অনুপাতে প্রতিবারই নির্বাচনী ব্যয় বাড়ছে। ভোটগ্রহণে যতজন নির্বাচনী কর্মকর্তা লাগে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগও দিতে হয় বেশ। এ কারণে পুরো নির্বাচন পরিচালনার ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় আইনশৃঙ্খলা খাতে। দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। আর র্যা ব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরা ছিলেন টহলে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/95597