৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৮

বাংলাদেশ ব্যাংকে আবার আগুন

হুমকির মুখে নিরাপত্তাব্যবস্থা

২৬ সেপ্টেম্বর, সকাল ৮টা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০তলা ভবনের ২০ তলার ফোরে বেজে ওঠে স্বয়ংক্রিয় আগুন নিয়ন্ত্রণ অ্যালার্ম। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুই নিরাপত্তাকর্মী পরিদর্শন করে দেখতে পান গবেষণা বিভাগের কনফারেন্স রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীরা আরো কাছে গিয়ে দেখতে পান সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডেটা সেন্টারের আইটি সার্ভারের আইপিএস থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ঘটনা সকালে হওয়ায় নিরাপত্তাকর্মীরা সহজেই আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনেন। কিন্তু ঘটনা রাতে হলে আবারো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারত।
এ ঘটনার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে সর্বশেষ ভয়াবহ আগুন লেগেছিল ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ। ওই সময় রাতে এক বিভাগের আগুন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকবল তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। ওই ঘটনায় বৈদেশিক নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের রুমসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি, কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী পুড়ে যায়।

ওই সময়ে আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে একজন নির্বাহী পরিচালককে আহ্বায়ক করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ৭ মে এ কমিটি অনুমোদন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। একই সাথে গভর্নর কমিটিকে ২৫ মে’র মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেন। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষভাবে পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে আটটি সুপারিশ দিয়ে ৫ জুন প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু তদন্ত কমিটির এই প্রতিবেদন গভর্নরের কাছে দীর্ঘ সাত মাস পর গত ২ জানুয়ারি উপস্থাপন করে মানব সম্পদ বিভাগ। এতে গভর্নর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এর ব্যাখ্যা চান। আরো দেড় মাস পর মানব সম্পদ বিভাগ ব্যাখ্যা দিলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গভর্নর তদন্ত কমিটির সুপারিশমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তবে তদন্ত কমিটির সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন করেছে মানব সম্পদ বিভাগ। সুপারিশে বিভিন্ন শাখায় এক্স-ক্যাডারের লোকবল নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে জেনারেল সাইডের লোকবল নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ দিকে আট মাস অতিবাহিত হতে চললেও বাকি সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। যেমন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ৮ নং সুপারিশে বলা হয়েছিলÑ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখাগুলোর মধ্যে যেসব শাখা ১(ক) কেপিআই শ্রেণীভুক্ত সেখানে উপমহাব্যবস্থাপকের (এক্স-ক্যাডার) অধীনে এবং অন্য যেসব শাখা ১(খ), ১(গ) কেপিআই শ্রেণীভুক্ত সেগুলো যুগ্ম পরিচালকের (এক্স-ক্যাডার) অধীনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা উপবিভাগ গঠন করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে’। জানা গেছে, কেপিআই ১(ক) শ্রেণীভুক্ত শাখা তিনটি, যথাক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম ও সিলেট শাখা। এ তিন শাখার জন্য আজ পর্যন্ত এক্স-ক্যাডারের উপমহাব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এগুলো সাধারণ ক্যাডারের লোকবল দিয়ে চালানো হচ্ছে। শুধু আলোচ্য অফিসগুলোয় সিটি (কেয়ারটেকার) ইউনিটকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ইউনিট নামকরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভিন্ন পদে এক্স-ক্যাডারের লোকবল না নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় সাধারণ বিভাগের লোকবলকে। তারা স্থায়ীভাবে না থেকে সুযোগ-সুবিধা মতো যেকোনো সময়ে অন্য বিভাগে বদলি হয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে এ নীতি চলতে থাকায় কেপিআই খ্যাত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য দক্ষ লোকবল সৃষ্টি হয়নি। এর ফলে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে আইটি, পরিসংখ্যান, মুদ্রানীতি, জনসংযোগ, লাইব্রেরি, মেডিক্যাল, প্রকৌশল বিভাগে আলাদা ক্যাডারের (এক্স-ক্যাডার) লোকবল রয়েছে। এসব বিভাগে দীর্ঘ দিন ধরে একই লোকবল থাকায় দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের অতি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগে (এসএমডি) নিজস্ব লোকবল গড়ে ওঠেনি। অন্য বিভাগের লোকবল এনে এ বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। আর সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর গবেষণা বিভাগে আগুন লাগে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেপিআই খ্যাত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের লোকবল দিয়ে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এতে নিরাপত্তার জন্য দক্ষ লোকবল সৃষ্টি হবে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকে দুর্ঘটনা বহুলাংশেই কমে যাবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/353167