বি. চৌধুরীকে যা বললেন কর্নেল অলি - ছবি : সংগৃহীত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ২:৩৫

বি. চৌধুরীকে কর্নেল অলি

মাংস হলো হালাল আর ঝোলগুলি হারাম

এলডিপির সভাপতি কর্নেল অব. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, রক্তপাত অবশ্যম্ভাবী। আগামী মাস থেকে বিরোধীদল এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হবে। এই সংঘর্ষে কত প্রাণ যাবে তার কোনো সীমারেখা নেই। এটা যদি এড়াতে হয়, তাহলে সরকারকে নমনীয় হতে হবে, একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোকেও নমনীয় হতে হবে। আলোচনায় বসতে হবে। উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে জনগণকে পথ দেখাতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে এলডিপির প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের এলডিপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নিজ নিজ জায়গায় অহংকার নিয়ে বসে থাকলে দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের রাজনীতি আইউব খানও করেছিল। উন্নয়নের রাজনীতি দিয়ে গণতন্ত্র চলে না। সেতু আর রাস্তা করে মানুষের পেট ভরে না। মানুষের প্রয়োজন ব্যক্তি স্বাধীনতা, সামাজিক স্বাধীনতা। ন্যায়বিচার, তার ভোটের অধিকার। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ চালাবে এটাই তার প্রাপ্য। বর্তমান সরকার যেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, সেটা মহাসচিব বলেছেন আমি বলতে চাই না। এতে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এখন সরকারের বিরুদ্ধে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ অবস্থান নিয়েছে। দেশের জন্য এটাও ভালো না।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি যত লোককে নিয়ে পারা যায় ঐক্য করা ভালো। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী যখন বিএনপির মহাসচিব ছিলেন তখন মুসলিম লীগের শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জয়পুরহাটের সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল আলীম রেলমন্ত্রী ছিলেন। এ ধরনের অনেকেই বিএনপিতে ছিল। বদরুদ্দোজা সাহেব তাদের মহাসচিব ছিলেন। তাহলে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্যে পার্থক্য হচ্ছে কেন? মাংস হালাল, আর ঝোলগুলো হারাম, এটা কেন? মহাসচিব থাকা অবস্থায় সব রাজাকার ভালো ছিল, পাকিস্তান বিরোধীরা ভালো ছিল, আর যখন ক্ষমতায় নেই, তারাই রাজাকার তারাই দেশদ্রোহী এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। বি. চৌধুরী সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন তো মুজাহিদ ও নিজামী সাহেব মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। আমি তো সেদিন মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলাম না। সেজন্য আমি ৮ তারিখের মিটিংয়ে বলেছিলাম, এখনও বলি জনগণের কাছে যারা পরাজিত হয়েছেন, যাদের পেছনে কোনো লোক নেই, তাদেরকে মাহাথির মোহাম্মদ বানানো যাবে না।

৯০ বছরের বুড়াকে ৮০ বছর বানানো যাবে, কিন্তু ৫০ বছর বানানো যাবে না। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার জন্মদাতা। আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা। যার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। আর আমরা তো ছেলের কাছেই বিক্রি হয়ে যাই। আমাদের ছেলেরা ভিওআইপির ব্যবসা করে। আমাদের ছেলেরা যারা আজকে ঐক্যজোটে তাদের অনেকের ছেলে ভিওআইপির ব্যবসা করে। তাহলে ভিওআইপির ব্যবসা কার থেকে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে, সজিব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে নিয়েছে। আর এদিকে বলছে আমরা ঐক্য করছি। রুমের ভেতরে থাকলে এক রকম, বাইরে বের হলে অন্য রকম। কখনও বলে ঐক্যজোটে আছি কখনও বলে ঐক্যজোটে নেই।

পত্রিকায় দেখলাম ভিন্ন। ঐক্যজোট কাজ করবে একদিকে, যুক্তফ্রন্ট কাজ করবে একদিকে। বিএনপি কাজ করবে একদিকে। তাহলে আমরা কোথায়? আমরা যারা বিএনপিতে আছি, আমাদের অবস্থানটা কোথায়? বিএনপির এটা স্পষ্ট করা উচিত। আমাদের নামতো কোনো খাতায় থাকতে হবে। ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে আমার কাছে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আসছিল, ওনাকে আমি পরিষ্কার বলেছি, উনি আমাকে বলেছেন, আপনি যদি আসেন এই মুভমেন্টে গতি সঞ্চারিত হবে। জনগণের মধ্যে আপনার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, আমি উত্তরে বলেছি, আমি জানি। কারণ আমি দুর্নীতিবাজ নই, আমি পরিষ্কার কথা বলি। আমি গেলেই গতি সঞ্চারিত হবে, জানি, তবে আমি কাউকে নেতা বানানোর জন্য যাব না। আমি যাব দেশের গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। সেটাতে যদি আছেন তাহলে কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুগান্তরে দেখলাম পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রধানমন্ত্রীকে পুনরায় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখতে চায়। তিনি যে কখন আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন এ বিষয়টা আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, এ ধরনের বড় চামচ যদি আপনার সাথে থাকে আপনার ক্ষতি হবে। এ ধরনের মাখমবাজেরা আপনার অধীনে থাকা উচিত নয়। : আপনার যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই স্টেটমেন্টটা করতো তাহলে এটা যথাযথ হতো, একজন পররাষ্ট্র সচিব কিভাবে বলতে পারেন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আবার নির্বাচিত করতে চান। সরকারি কর্মকর্তা এ ধরনের বক্তব্য রাখতে পারেন না। এটা সরকারি যে কর্মচারীদের যে আইন আছে তার লঙ্ঘন করেছেন। আশা করি প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো, খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হতো না। আমরা এই মিটিং থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করছি। বাংলাদেশে দিনের বেলা কোনো ভোটের ব্যবস্থা নেই। ভোট করে পুলিশ আর কিছু প্রিজাইডিং অফিসার। রাত ১২টা থেকে শুরু করে ভোর চারটায় ভোট শেষ হয়। এ ব্যবস্থা থাকলে বাংলাদেশ ধ্বংস হবে, রক্তপাত এড়ানো যাবে না। কারণ যারা ক্ষমতায় তাদের বোঝা উচিত আমরা কেউ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবো না। কয়দিন ক্ষমতায় থাকবো, কয় বছর থাকবো। তারপর আমার অবস্থা কি হবে। একটা কুকুরের চেয়েও আমার অবস্থা খারাপ হবে। সেটা একটা মানুষের কাম্য? মানুষকে কষ্ট দিয়ে, মানুষের সম্মান নষ্ট করে, দেশকে ধ্বংস করে আমার ক্ষমতা কিসের জন্য প্রয়োজন। আমাকে তো মরতে হবে। তখন তো দেশের ১৮ কোটি মানুষ আমার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে না।

আমাদের অহংকারের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। যাদের ডাকে জনগণ সারা দেবে না ওই ধরনের নেতা থেকে সরে আসতে হবে। আমি আবারও বলি বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল, জাতীয়তাবাদী শক্তির এক নম্বর প্রতীক। তারা যদি এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার করেন, পুনর্গঠন করেন এখনও তাদের পক্ষে যেকোনো কাজ করা সম্ভব। নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ২০ দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো কথা নেই। এখন কথা হলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আমি যে দফাগুলো বলেছি ২০ দলের পক্ষ থেকেও সেই দফাগুলো বলা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণমাধ্যমের যে আইন করা হয়েছে আমরা আশা করবো, সম্পাদকদের সাথে বসে সেটার একটা সম্মানজনক সমাধান করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যদি যায় তখন তাদের অবস্থা কি হবে। কারণ এই সাংবাদিকরাই থাকবে, এই সংবাদমাধ্যমই থাকবে। তাদের ওপর যদি অত্যাচার হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকা অবস্থায় এই সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাবে। সুতরাং এমন আইন করা উচিত না, যেটা আমি ক্ষমতায় না থাকলে আমার বিরুদ্ধে যাবে। এমন আইন করতে হবে যেটা জনগণের জন্য ভালো, সকলের জন্য ভালো। সংবাদমাধ্যম যাতে নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের।

এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, আমরা জামায়াতকে দেখেই ২০ দলীয় জোটে এসেছি। জামায়াতকে ছাড়া কোনো বৃহত্তর ঐক্য জোট হবে না। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন কোনো দ্বিমত করেননি। মাহী বি. চৌধুরী নানাভাবে চেষ্টা করছে যাতে জোট না হয়। জামায়াতকে ছাড়া কোনো জোট হবে না।

কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণতান্ত্রিক মহিলা দলের সভাপতি অধ্যাপিকা খালেদা খাতুন প্রমুখ।

http://www.dailynayadiganta.com/politics/352931