২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৯

সরকারি কর্মচারীদের ওপর নজরদারি

রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজপথ তেতে ওঠার মুখে সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে। আন্দোলনে তারাও শরিক হতে পারেন এই দুর্ভাবনায় পড়েছে সরকারি মহল। আর তা হলে আন্দোলন বেগবান হওয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ কথা জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছু দিন থেকেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা শীর্ষ আমলাদের কার্যক্রম মনিটরিং করছে। সচিবালয়েও রাখা হচ্ছে নজরদারি। এই নজরদারির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে যাতে কোনো কর্মকর্তা তাতে শরিক না হন। এ জন্য ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদেরকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকার নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। গত মাসাধিককাল ধরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মন্ত্রীদের কথা সচিব কিংবা অধস্তনরা ঠিকমতো শুনছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী আমলারা কাজ ফেলে রাখছেন এবং জটিলতা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন খোদ মন্ত্রীরাই। নীতিনির্ধারণী এবং ব্যয়সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো এখন আর গতি পাচ্ছে না। আমলাদের অসহযোগিতার কারণে কোনো প্রকল্পও নেয়া যাচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে শেষ সময়ে এসে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক গত ১০ বছরে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের এসব কাজ বই আকারে প্রকাশ করে তা নির্বাচনের আগে ছড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এই কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সব প্রতিষ্ঠান এখনো সেটা সম্পন্ন করতে পারেনি। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এ জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করছেন, গত ১০ বছরে সরকার প্রশাসনে ১০ বার পদোন্নতি দিয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এ ক’বছরে ২টি বিশেষসহ ৯টি বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে; যাতে নিয়োগকৃতদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কঠোরভাবে যাচাই করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ফলে তারা সরকারের ওপর খুশি থাকারই কথা; কিন্তু সম্প্রতি একাধিক জরিপ রিপোর্টে ‘কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে এবং তারা বিরোধী দলের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারেন’ বলে জানানো হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, বিরোধী দল ১৯৯৬ সালে ‘জনতার মঞ্চের’ মতো আন্দোলন শুরু করলে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাতে শরিক হতে পারেন, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এমনকি সচিবালয় থেকেও কর্মচারীরা বের হয়ে আসতে পারেন। এই তথ্য জানার পর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা দুর্ভাবনায় পড়েছেন। এর সাথে আমলাদের কাজ ফেলে রাখার খবরে এ দুর্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনে পদোন্নতি এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কঠোরভাবে যাচাই করা হয়। কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী অতীতে কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তা তদন্ত করা হয়। কর্মকর্তার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও পারিবারিক কারণেও পদোন্নতি বঞ্চিত করার নজির রয়েছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরকারি ছাত্র সংগঠনের সমর্থক থাকলেও তাতে কাজ হয়নি। পরিবারের কোনো সদস্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততাও তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। সরকারের শেষ সময়ে এসব বিষয় সামনে আসছে।
প্রশাসনিক দিক থেকে আরো একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে। তা হলো যেসব কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী বর্তমান সরকারের সময়ে বারবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন তাদের সামনে আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের চাকরিও প্রায় শেষের দিকে। বর্তমান সরকার ফের ক্ষমতায় এলে বঞ্চিত এসব কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হতে পারে। বঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ এসব কর্মকর্তার প্রতিই বেশি নজরদারি করা হচ্ছে।


 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/352892