২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:৩১

কার্যকরী গণআন্দোলন সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন : বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী দু’টি রাজনৈতিক দল হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ দু’টি দলের অঙ্গ সংগঠন, বিশেষ করে দেশের সর্ববৃহৎ দুটি ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিশ দলের ঐক্যকে রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত সুদৃঢ় করতে পারলেই আন্দোলন, নির্বাচন, যেকোন দাবি আদায়সহ একটি স্থিতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব। শুভাকাক্সিক্ষ মহল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, দেশের প্রতিটি থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে যদি ২০ দলের বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা ও কর্মীদের মধ্যে আন্তরিক ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক, সমন্বয় গড়ে ওঠে, যে কোন সফলতার জন্য এটাই যথেষ্ট। এর প্রমাণ অতীতেও রয়েছে। বিএনপি বা ২০ দল আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলুক এখানে কারও বিন্দুমাত্র দ্বিমত নেই, বরং সবাই এ ধরনের বৃহত্তর প্রচেষ্টাকে সব সময় স্বাগত জানায়। কিন্তু আমার কথা হলো মূল ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। যে কোন স্থাপনার ভিত্তি মজবুত থাকলে এর ওপর অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ। কিন্তু ভিত্তি দুর্বল রেখে ২০ দলের সাথে আরেকটা বা আরও সংখ্যা যোগ করে সংখ্যা বাড়িয়ে নিলেও যেই লাউ সেই কদুই হবে।
সুতরাং কারো চাপে পড়ে কৌশলের নামে কিংবা যেকোনভাবেই বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে এটা রাজনৈতিক বিপর্যায়ের প্রচেষ্টার শামিল হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

পেছনে দু'একবার বিশ দলের আন্দোলন সফল না হওয়ার কারণে আত্ম-বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে বিএনপিসহ বিশ দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদেরকে নিজেরা অবমূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। দেশবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এখনো বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থিত প্রাণপ্রিয় জোট হলো বিশদলীয় জোট এবং এ জোটের প্রধান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বলে দেশের অধিকাংশ জনগণ মনে করেন। তাকে মাইনাস করে নির্বাচন করার যেকোন ষড়যন্ত্র দেশবাসী কোনভাবেই মেনে নিবে বলে মনে হয় না। দেশের সাধারণ জনতাসহ রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল মনে করেন, তাকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এর অন্যথা হলে নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী ২০ দলীয় জোট কিংবা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

সুতরাং সুধী মহলের প্রত্যাশা, বিশদলীয় জোট বিশেষ করে বিএনপি জামায়াতের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের নিজেদের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ ও উদ্যোগ বাড়ানো সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে জোটের বড় দল হিসেবে বিএনপিকে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ভেদাভেদ ভুলে সাহসিকতার সাথে মাঠের নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে। এই সাথে জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া যদি এর সাথে শামিল হয়, তাহলে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। একটি কার্যকরী গণআন্দোলন সময়ের অপরিহার্য দাবি। আর সেটি সম্ভব হতে পারে কেবলমাত্র বিএনপি-জামায়াতের ইস্পাত প্রাচীর ঐক্যের মাধ্যমে। অন্য সকল তৎপরতা শুধুমাত্র একটা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এর বেশী কিছু নয় বলে সচেতন মহল মনে করেন। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দেশের জনগণ বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বে একটি কার্যকর আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ইনশাআল্লাহ এবারের আন্দোলনে অন্যান্য সরকার বিরোধী শক্তিগুলোসহ সকলেই যার যার জায়গা থেকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন এবং ইনশাআল্লাহ আন্দোলন সফল হবেই।

নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার প্রকাশ অন্যের কাছে নিজেকে হেয় বানায়। অন্যরা তখন আন্ডারমাইন্ড করার সুযোগ নেয়। কিছুটা লক্ষণ ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাবের নামে বিএনপিকে তাদেরকে ১৫০ আসন ছেড়ে দিতে হবে কিংবা বিএনপি কার সাথে রাজনীতি করবে আর কার সাথে করবে না এ ধরনের কথাবার্তা জনগণের ঐক্যকে বিভ্রান্ত ও দুর্বলই করবে।
এ ধরনের কথাবার্তা যারা বলেন, তাদের মধ্যে দু’একজন এমন আছেন, যারা অতীতে বিএনপিতে থাকতে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদ পদবিতে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের বিভিন্ন সভা ও ঘরোয়া বৈঠকে একান্ত আলাপচারিতার সচিত্র ডকুমেন্টই প্রমাণ করে জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের কতটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে নিজেদের আচার-আচরণ ও মনোমালিন্যের প্রেক্ষিতে পদ থেকে ছিটকেও পড়েছিলেন। কিন্তু ভুল ধারণার মধ্যে নিমজ্জিত আছেন বলে মনে হয় যে, জামায়াত এখানে কলকাঠি নেড়েছে। আরেকজন মেয়র পদপ্রার্থী হয়েছিলেন, ২০ দলের সমর্থন পেতে চেয়েছিলেন, পাননি। যার ফলে উল্লেখযোগ্য কোন ভোটও পাননি। উনারও ধারণা জামায়াত কলকাঠি নেড়েছিল। যা কিছু দেশে ঘটুক না কেন তার পেছনে জামায়াতের কলকাঠি নাড়ার গল্প অনিবার্য। বিশেষ মহলের কাছে রীতিমত এটা মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। অথচ জামায়াত ঐসব দেউলিয়া ও জঘন্য রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
ঐক্যের উদ্যোক্তা সম্মানিত সিনিয়র সিটিজেনদের আহ্বান জানাবো, একটা বিষয় নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করে দেখুন, সত্যিকার অর্থে দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি পাওয়া যাবে, যে বলবে আমি দেশের পতাকাকে সম্মান করি না কিংবা আমি স্বাধীনতা বিরোধী! সুতরাং জোর করে দেশের মানুষকে পক্ষ বিপক্ষ আখ্যা দিয়ে ঐক্যের নামে যাই করুন না কেন জনগণের কিছু লোকের সাড়া পেলেও ব্যাপকসংখ্যক মানুষের কাছে সাড়া মিলবে না নিশ্চিত করে বলা যায়।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসে এখনও পক্ষ-বিপক্ষ বলে জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা কি আদৌ স্বাধীনতার চেতনা হতে পারে? বরং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সকলকে সাথে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।

 

http://www.dailysangram.com/post/347275