২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৪৪

ঢিমেতালে নদী ড্রেজিং বেশির ভাগ অর্থ অব্যয়িত

ছ’বছরে অগ্রগতি মাত্র ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ

দিন দিন নদীপথের পরিমাণ যে হারে হ্রাস পাচ্ছে তাতে জরুরি ভিত্তিতে নৌ-পথগুলো ড্রেজিং করা না হলে অচিরেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম হাতে নিয়েও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়াতে জটিলতা বাড়ছে। ছ’বছরে যে ড্রেজিং কাজ শেষ করার কথা ছিল, তা এখন ৯ বছরে গিয়ে ঠেকছে। ছ’বছরে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হলো মাত্র ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। অবশিষ্ট এক হাজার ৯০ কোটি টাকার কাজ আগামী ২০১৯ সালের জুনেও শেষ করতে পারবে না বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। এখন মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

নদী রক্ষা কমিশনের এক তথ্যানুযায়ী, নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের প্রায় সাড়ে ৭ শ’টি নদী রয়েছে। কিন্তু ড্রেজিং না করা ও অপরিকল্পিত ইন্টারভেনশনের কারণে দেশের প্রায় ২৩০টি নদী এখন মৃত। বর্তমানে নদীগুলো পলিউশন, সিলটেশন, তীর দখল, ব্লকেজ ইত্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার বেশির ভাগ শিল্প নদীর তীরঘেঁষে স্থাপন করায় প্রতিদিন ১ শ’ টন শিল্পের বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এ দিকে, নদী খননের জন্য গত ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ১৪টি ড্রেজার কিনেছে সরকার। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আরো ৫০টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে নদী খননের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত এক হাজার ৩৮০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে। নদী খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য তিনটি এক্সক্যাভেটর ক্রয় করা হয়েছে। আরো ছয়টি এক্সক্যাভেটর ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। আর ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আরো ২০টি ড্রেজার কেনার প্রক্রিয়া শেষপর্যায়ে রয়েছে।

আইএমইডির সরেজমিনের তথ্যানুযায়ী, অভ্যন্তরীন নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম-২৪টি রুটে) কার্যক্রম এক হাজার ৮৭৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালে অনুমোদন দেয় হয়। এটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল; কিন্তু সেটা করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ। কাজের আইটেমের দর পরিবর্তন, কাজের বিভাজন এবং ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৯২৩ কোটি টাকা করা হয়।
আইএমইডির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ড্রেজিং মেটারিয়াল বা উত্তোলিত বালু নদী বা নদীর পাড়ে না ফেলার নির্দেশনা রয়েছে; কিন্তু এই প্রকল্পে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নদীতে ফেলা হয়েছে। ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ নদীর পাড়ে এবং ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ কৃষিজমিতে ফেলা হয়েছে। এটা নদীতে বা নদীর পাড়ে না ফেলা উচিত।

মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদীগুলোর নাব্যতা আনতে ৫৩টি রুটের মধ্যে প্রথমপর্যায়ে ২৪টি রুটে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। রুটগুলো হচ্ছেÑ ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম নৌপথ, চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল নৌপথ, গাশিয়াখালী-বরিশাল-কালীগঞ্জ-চাঁদপুর-আরিচা নৌপথ, ভৈরববাজার-লিপসা-চটক-সিলেট নৌপথ, গাজলাজর-মোহনগঞ্জ নৌপথ, লোয়ারগা-দুলোভপুর নৌপথ, চিটরি-নবীনগর-কুটিবাজার নৌপথ, নরসিংদী-কাটিয়াদী নৌপথ, নরসিংদী-মরিচাকান্দি- সেলিমগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর-হোমনা নৌপথ, দাউদকান্দি- হোমনা-রামকৃষষ্ণপুর নৌপথ, চাঁদপুর-ইচলি-ফরিদগঞ্জ নৌপথ, বরিশাল-ঝালকাঠি-পাথরঘাটা নৌপথ, খুলনা-গাজিরহাট-মানিকদা নৌপথ, নন্দীবাজার-মাদারীপুর নৌপথ, দিলালপুর-গৌরাদিঘার-চামড়াঘাট-নীলকিয়াটপাড়া-নেত্রকোনা নৌপথ, মনুমুখ- মৌলভীবাজার নৌপথ, মিরপুর-সাভার নৌপথ, শ্রীপুর- ভোলা খেয়াঘাট-গঙ্গাপুর-ভোলা নৌপথ, চৌকিঘাটা-কালীগঞ্জ নৌপথ, পটুয়াখালী-মীর্জাগঞ্জ নৌপথ, হোসনাবাদ-টরকী-ফাঁসিতলা নৌপথ, দালারচর-বালিয়াকান্দি-বোয়ালমারী-কাশিয়ানি নৌপথ ইত্যাদি। এরই মধ্যে কয়েকটি নৌপথের কাজ শেষ হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মৌলভীবাজারে খননকাজ এখনো শুরু হয়নি। বি-বাড়িয়াতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সাভার-জাবরা নৌপথের কাজ জনগণের বাধার কারণে শুরু করা যায়নি। সাতটি রুটের কাজ বর্তমানে সমাপ্ত হয়েছে।
অগ্রগতি বিশ্লেষণে আইএমইডি বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সম্পূর্ণ অর্থ ছাড় হয়েছে। সম্পূর্ণ টাকাও ব্যয় হয়েছে। ফলে জুন পর্যন্ত অগ্রগতি ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর টাকা ব্যয় হয়েছে ৮০৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এখানে প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি অনেকাংশে কম। প্রকল্পের মেয়াদের বাকি এক হাজার ৯৩ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হবে না। গত ৬ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি যেখানে ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ সেখানে বাকি দেড় বছরে এবং আরো এক বছর বাড়ানোর পর কিভাবে ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হবে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/352623