২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৪০

ইসলামি শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসির বৈষম্য

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত সিলেবাস ও কারিকুলাম অনুসরণকারী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কামিল ডিগ্রিকে সরকারিভাবে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার পরও সরকারি কর্ম কমিশন এ বিষয়টি অগ্রাহ্য করে ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে ছাইফুল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, মাদরাসার দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল সনদের মান যথাক্রমে এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি ও মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেয়া হয়েছে। গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেই এটি জারি করা আছে। এ বিষয়টি কার্যকর করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয়। এর ব্যতিক্রম করার অবকাশ নেই।

মাদরাসার কামিল সনদের মানের ব্যাপারে কোনো বিতর্ক না থাকা সত্ত্বেও গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদের জন্য শিক্ষক নিয়োগে কামিল সনদধারীদের আবেদনের যোগ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়, যার মধ্যে ১৭২টি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পদের বিপরীতে বিস্ময়করভাবে কামিল ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারার বিষয়টি অনুল্লেখিত রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি কর্ম কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কামিলের সনদকে এমএ মান দেয়ার বিষয়টি অবজ্ঞা করে নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত যেটি গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে জারি করা হয়েছে তার বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের নেয়ার অবকাশ নেই। বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা খতিয়ে দেখতে পারেন।

সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইসলাম ও নৈতিকতা বিষয়ে শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার যে উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণী বা সমমানের সিজিপিএ/ জিপিএতে ক) আরবি বা ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। খ) আরবি বা ইসলামি শিক্ষা বিষয়সহ স্নাতক বা সম্মানের ডিগ্রি এবং বিএড বা ডিপ ইন এড ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা। বিজ্ঞপ্তিতে সব পদের জন্য যে নির্দেশাবলির উল্লেখ রয়েছে তার ক্রমিক নম্বর ৮৩-৯৪ এর পদে রেজিস্ট্রেশনকারী প্রার্থীদের বাংলা ৫০, ইংরেজি ৫০, সাধারণ জ্ঞান ৪০ এবং গণিত ও মানসিক দক্ষতার বিষয়ে ৬০ নম্বরসহ মোট ২০০ নম্বরের ২ ঘণ্টার এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ বৈষম্যমূলক উল্লেখের কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, আলিয়া মাদরাসাগুলো থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কেন সমাজে অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকবেন। এ দেশের নাগরিক হিসেবে তারা কি সরকারি বিদ্যালয়ে চাকরি করার নাগরিক অধিকার পাবেন না? সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে এসএসসিকে দাখিল, এইচএসসিকে আলিম, ফাজিলকে ডিগ্রি ও কামিলকে এমএ মান দেয়া হয়। দাখিল, আলিম পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স করলে তিনি সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন। আর ধর্মীয় বিদ্যালয়ে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পাস করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন নাÑ এটি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত হওয়ার কথা নয়।
অথচ ইসলামি শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান করার জন্য কামিল বা এমএ পাস শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে যোগ্য হওয়ার কথা ছিল। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি এ ধরনের বৈষম্য করে একটি কুচক্রীমহল বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থী কমানোর ষড়যন্ত্রে সক্রিয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক ৫০ নম্বরের প্রশ্ন রাখা হতো। এবারে মানবণ্টনে তাও তুলে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করেছেন।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সাথে পিএসসির আচরণকে চরম বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, পিএসসির এটি চরম অন্যায়মূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এটি দুঃখজনকও বটে। অথচ আলেম সমাজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা দেশের শান্তিপূর্ণ মানুষ।
তিনি আরো বলেন, মাঝে মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান এমন সব আচরণ করে, মনে হয় মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ঘরজামাইয়ের মতো। অথচ অতীতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বহু ধর্মবিষয়ক শিক্ষক রয়েছেন, যারা মাদরাসা থেকে সরকার স্বীকৃত ডিগ্রিধারী।


http://www.dailynayadiganta.com/first-page/352632