এম হাফিজ উদ্দিন খান
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৩৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধানবিরোধী

সাক্ষাৎকারে এম হাফিজ উদ্দিন খান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, সংসদে পাস হওয়া নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধানবিরোধী। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী। নতুন আইনে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত হওয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় হয়রানি ও গ্রেফতার এবং সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে গ্রেফতারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেউ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতেই পারেন। সে জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতার এটা কেমন কথা।

এক প্রশ্নের জবাবে এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, বর্তমান যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হতে যাচ্ছে তাতে আগের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মতোই মানুষ হয়রানির শিকার হবেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘৩৯ (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধসাপেে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদেেত্রর স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করায় কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ বা সংরণ করা হয়, বা প্রকাশ করে বা কাউকে করতে সহায়তা করে ওই আইন ভঙ্গ করলে এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

২০০৬ সালে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে এ আইন সংশোধন করার পর এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। আইনের ৫৭ ধারাবলে পুলিশকে দেয়া অধিকতর ক্ষমতা প্রদান এবং আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। নিরাপত্তার পরিবর্তে এ আইন হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের জন্য। ভিন্নমত দমন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৫৭ ধারাকে। গত বছর এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে সাংবাদিক সমাজ। তখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সংশোধন করে নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেখানে ৫৭ ধারা নিয়ে উদ্বেগের অবসান ঘটানো হবে। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বিষয়ে তখন যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়, তাতে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভিন্ন নাম দিয়ে ৫৭ ধারাকে বহাল রাখা হচ্ছে মাত্র। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন হলে তাতে দেখা যায়, ৫৭ ধারা নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল তা আগের মতোই বহাল রাখা হয়েছে ভিন্ন নামে। ফলে তখন থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আপত্তি চলতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক নেতাদের আপত্তি উপেক্ষা করে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/352634