প্রতীকী ছবি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৭

জনতা ব্যাংকের ৬ মাসে লোকসান ১৬শ’ কোটি টাকা

৮ ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা * মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার এবং কার্যকর করতে না পারলে ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে - খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

জনতা ব্যাংক লোকসানে রেকর্ড গড়েছে। এ বছর প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটির নিট লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা প্রায় ১৬শ’ কোটি। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সরকারি ব্যাংকটির এমন দুরবস্থা। একই সময়ে জনতা ব্যাংকসহ ৮ ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, দেশের ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ৮টি ব্যাংক লোকসানে পড়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক ৩টি ও বেসরকারি ৫টি। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে বেশি লোকসানে নতুন তিন ব্যাংক। একটি বিদেশি ব্যাংকও লোকসানে পড়েছে। তবে টাকার অঙ্কে লোকসান সবচেয়ে বেশি সরকারি ব্যাংকে। মোট লোকসানের তিন ভাগের দুই ভাগই সরকারি তিন ব্যাংকের। বিশেষ করে জনতা ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকিং খাতে মনিটরিং খুবই দুর্বল। সে কারণে ঋণ বিতরণে নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। অতিমাত্রায় অনিয়মের ফলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। সে কারণে এক সময়ের ভালো ব্যাংক জনতাও আজ লোকসানে পড়েছে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির ক্রিসেন্টসহ বড় কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা কম। এ ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি সব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে সমান ক্ষমতা দেয়া উচিত। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার এবং কার্যকর করতে হবে। তা না হলে ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।

সূত্র জানায়, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে জনতা ব্যাংকের নিট লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ঋণে ব্যাপক অনিয়ম, ঋণসীমা লঙ্ঘন করে ক্রিসেন্ট ও এননটেক্সকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন, নিয়মবহির্ভূতভাবে নগদ সহায়তার অর্থ ছাড়সহ নানা কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাস্তিতে পড়ায় এক সময়ের লাভজনক এ ব্যাংকটি এখন বড় অঙ্কের লোকসানে।
জনতা ব্যাংক থেকে অনেকে আমানত তুলে নেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এখন ব্যাপক তারল্য সংকটের মুখে। এটা মোকাবেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি এখন অন্য ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কথা হয় জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার শফিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংক ছিল প্রথম সারির। এ ব্যাংকের যথেষ্ট সুনামও ছিল।
এখন সে ব্যাংক লোকসানে পড়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এক সময় সুনামধারী বেসিক ব্যাংকেরও আজ একই পরিণতি। কেন যেন ধীরে ধীরে পুরো ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে এখনই নজর দেয়া দরকার। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
জনতা ব্যাংকসহ নানা অনিয়মের কারণে আলোচিত ৮টি ব্যাংক বড় অঙ্কের লোকসান গুনলেও সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের নিট মুনাফা বেড়েছে। ২০১৮ সালের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকগুলো ১১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করে।

এখান থেকে কর ও প্রভিশন বাদ দিয়ে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম ৬ মাসে ১০ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফার বিপরীতে নিট মুনাফা ছিল এক হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। নিট মুনাফাই ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা। নিট মুনাফার ওপর ভিত্তি করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক।
লোকসানে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রথম ৬ মাসে লোকসান দিয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের প্রথম ৬ মাসে মাত্র ১৩ কোটি টাকার লোকসান ছিল। জুন শেষে ফারমার্সের এক হাজার ৫২১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি দেখানো হয়েছে, যা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। নতুন প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংক প্রথম ৬ মাসে নিট ১৩ কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে।

গত বছর মুনাফা ছিল ৩০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকটিও বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণে হাবুডুবু খাচ্ছে। এছাড়া এনআরবি ব্যাংক গত বছরের প্রথম ৬ মাসে ১৯ কোটি টাকা মুনাফা করলেও এবার লোকসান দিয়েছে ১০ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ২১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান লোকসান দিয়েছে ২১ কোটি টাকা। এ ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৯৪ শতাংশই খেলাপি ঋণ। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৫৫৩ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংক লোকসান দিয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৫৭ শতাংশই খেলাপি। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে সম্প্রতি ব্যাংকটির এমডি মুহাম্মদ আউয়াল খানও পদত্যাগ করেছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/94616