২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৪

কালো আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে

জাতীয় প্রেস কাব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশকে যেভাবে ঢালাও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাতে স্বাধীন সাংবাদিকতা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। মুক্ত ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সাংবাদিকরা সেল্ফ সেন্সরশিপ আরোপ করতে বাধ্য হবেন। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এমন কালো আইনের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে এখনই।

নয়া দিগন্তকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেও এমন আইন হয়নি। সমাজের প্রকৃত সত্য ধামাচাপা দিতে এবং দুর্নীতি অত্যাচারের কাহিনী যাতে জনসমক্ষে না আসে সে জন্য এই আইন করা হয়েছে। এই আইনের বিষকাঁটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। না হলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষ যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয়-সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এখানে সে উদ্দেশ্য কৌশলে বিতর্কিত করা হয়েছে। এভাবে প্রণীত আইন আমরা কেউ চাইনি। এ আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতা খর্ব হবে। ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস দেখাবে না।
তিনি বলেন, আইনের ৪৩ ধারায় পুলিশকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে পুলিশ কাউকে অভিযুক্ত হিসেবে সন্দেহ করলে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, জামিন না দেয়া এবং কম্পিউটার ডাটাবেজ,সার্ভার ইত্যাদি জব্দ করতে পারবে। কেউ এ আইনে গ্রেফতার হলে তিনি সহজে জামিন পাবেন না। অনুমানের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ মনে করলেই কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। অর্থাৎ সাংবাদিকতা এখন পুলিশের নজরদারির মধ্যে থেকেই করতে হবে।

প্রবীণ এই সাংবাদিক নেতা বলেন, তথ্য জানার অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। এর ৩২ ধারায় অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের কথা বলা হয়েছে। তথ্য জানার যে অধিকার আমাদের আছে সেখানে নতুন এ আইনে বলা হয়েছে মুক্ত তথ্যপ্রবাহ করা যাবে না। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য প্রকাশ করা হলে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
তাহলে কী দাঁড়াল? আগে অবাধ তথ্যপ্রবাহের যে কথা বলা আছে এ আইন তো তার পরিপন্থী। ফলে সত্য প্রকাশ করা যাবে না।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই আইন আমাদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে হিমালয়ের মতো বাঁধা। এর বিরুদ্ধে এখনই সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই আইনটি প্রণয়নের পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে এর সমালোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সাংবাদিকদের সব সংগঠন এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ নয়।
বিচ্ছিন্নভাবে এর প্রতিবাদ হচ্ছে। অথচ এটা রুখতে হলে সবাইকে একতাবদ্ধ হয়েই কথা বলতে হবে। এই আইনটি এখনই রুখা না গেলে এর পরিণতি ভালো হবে না। সবাইকেই এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/352356