এইচআরডব্লিউ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১:৩০

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সমালোচকদের টুঁটি চেপে ধরবে

বাংলাদেশে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারের সমালোচকদের টুঁটি চেপে ধরবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের সাংবাদিকদের জোরালো বিরোধিতা সত্ত্বেও গত সপ্তাহে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ পাস করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। দেশে মুক্ত মতপ্রকাশের ওপর এটি একটি বড় আঘাত। ব্যাপক সমালোচিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) পরিবর্তে সেখানে এই আইন করা হল। আগের ওই আইনের সবচেয়ে সমস্যাযুক্ত বেশির ভাগ বিধান এবং শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশকে ক্রিমিনালাইজ করার বিধান রয়েছে নতুন এই আইনে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নির্যাতনের একটি অস্ত্র এবং বাংলাদেশ মুক্ত মত প্রকাশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যেসব আইন মানতে বাধ্য তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে কমপক্ষে ৫টি বিধান আছে, যা দিয়ে কথা বলা বা মতপ্রকাশকে ক্রিমিনালাইজ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এই আইনটি সমালোচকদের কণ্ঠকে দমন করার জন্য ব্যাপক অর্থে একটি লাইসেন্স।
বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কিছু ধারায় মুক্ত মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই আইনের ২১ নম্বর সেকশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অথবা স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতির জনকের মর্যাদার বিরুদ্ধে কোনো প্রপাগান্ডা বা প্রচারণা ছড়িয়ে দিলে ১৪ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রাখা হয়েছে। অথচ ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কমিটির আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, একটি দেশ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে বাধ্য। তাই ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা নিয়ে মতামত প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য করা অসঙ্গত।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(ক) ধারায় ‘আগ্রাসী ও ভীতিকর’ (অ্যাগ্রেসিভ অর ফ্রাইটেনিং) তথ্য প্রকাশ করার অপরাধে তিন বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রাখা হয়েছে। এই শব্দ দুটি সম্পর্কে আইনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই। কোন জাতীয় মত আইন লঙ্ঘন করবে তাও বলা নেই। এই অস্পষ্টতার সঙ্গে বড় ধরনের শাস্তির বিধান একসঙ্গে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ বৃদ্ধি করবে। আইনের ৩১ নম্বর ধারায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এমন তথ্য পোস্ট করার কারণে ১০ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে। তবে কোন জাতীয় বক্তব্য বা মত আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে তা সুস্পষ্টভাবে বলা নেই। ফলে এই ধারা ব্যবহার করে সরকার যে মত বা বক্তব্যকে পছন্দ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে বিচারের সুযোগ পাবে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন- আইনটিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশের মতো মানবাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইনে ‘হেট স্পিস’ বা ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তাতে খেয়ালখুশিমতো ও আইনকে নিষ্পেষণমূলকভাবে প্রয়োগের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। আইসিটি আইনের নিষ্পেষণমূলক ধারা ৫৭-এর মতোই এই আইনের ২৯ নম্বর ধারা। ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন বক্তব্যের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে আইনের ২৮ নম্বর ধারায়। নতুন আইনে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা ওয়ারেন্টবিহীন তল্লাশি করতে পারবে। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এ আইনের ৩২ নম্বর ধারার বিরোধিতা করে আসছেন। এ আইনে সরকার ব্যবহৃত কোনো কম্পিউটার অথবা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের গোপনীয় তথ্য (ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন) সংগ্রহ করা, হাতবদল করা বা সংরক্ষণ করার জন্য ১৪ বছর পর্যন্ত শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটা করা হলে আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

 

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/94232/