২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫৮

এক মাস আগে নিখোঁজ আসাদের লাশ বেড়িবাঁধে

র‌্যাবের দাবি তিনি মাদক ব্যবসায়ী, পরিবার বলছে তুলে নেয়া হয়েছিল * মাদারীপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ডাকাত সর্দার নিহত

কোরবানির গরু কিনতে ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন আসাদুল হাসান। সঙ্গে ছিল গরু কেনার ৯৫ হাজার টাকা। তেজগাঁও গরুর হাটে যাওয়ার কথা ছিল তার; কিন্তু পরে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এক মাস পর সোমবার সকালে তার লাশ পাওয়া যায় মিরপুর বেড়িবাঁধে।

র‌্যাবের দাবি, ভোরে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আসাদুল নিহত হয়েছেন। র‌্যাব-২ এর দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক জানান, একদল মাদক চোরাকারবারি বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থান করছে- এমন খবর পেয়ে র‌্যাবের টহল দল সেখানে যায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে একজন আহত হয়, অন্যরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল ও এক হাজারের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। পরে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে একটি মানিব্যাগ পাওয়া যায়। সেখান থেকেই আসাদুলের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি থানায় মাদক চোরাচালান ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে বলেও দাবি করেন সাইফুল মালিক।

তবে আসাদুলের মা তহমিনা বেগম বলেন, সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর শেরেবাংলা নগর বিএনপি বাজারে রতনের দোকান থেকে মোবাইলে রিচার্জ করেছিল। সেখানে গেলে প্র্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদের জানিয়েছিলেন, সাদা পোশাকের ৫-৭ জন লোক আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এ ঘটনা উল্লেখ করে শেরেবাংলা নগর থানায় ২৫ আগস্ট একটি জিডি করেন বলেও জানান তিনি। জিডি করার পর থেকে ছেলের সন্ধান দাবিতে পুলিশ ও র‌্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, যে দোকান থেকে আমার ছেলে টাকা রিচার্জ করেছিল ওই দোকানে সিসি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ডিলিট করে দেয়া হয়েছে। তার প্রশ্ন ফুটেজ কারা ডিলেট করল? কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ১ মাস ৩ দিন পর আমার ছেলের লাশ পেলাম। আমার নিরপরাধ ছেলেকে হত্যা করে র‌্যাব বলছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা আমাদের জানা নেই। আসাদুল একজন মাদক ব্যবসায়ী। যারা মাদক ব্যবসা করে তারা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন জায়গায় যায়। কে কোথায় কিভাবে গেছে সেটা তো আমরা বলতে পারছি না। আমাদের সঙ্গে মিরপুর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে আসাদুল।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালেও র‌্যাবের সঙ্গে তার ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছিল। তখন তার পায়ে গুলি লেগেছিল। তারপরও অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

মাদারীপুরে ডাকাত সর্দার নিহত : কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কালকিনি উপজেলার শীর্ষ ডাকাত সর্দার আলিম মোল্লা নিহত হয়েছে। রোববার রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখারা গ্রামে বসে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়। সে কালকিনি উপজেলার ডাসার এলাকার পূর্ব কোমলাপুর গ্রামের শামসুল হক মোল্লার ছেলে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিরখারার একটি বাড়িতে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে জেলা ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে ডাকাতরা গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ডাকাত সর্দার আলিম মোল্লা নিহত হয়।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, নিহত আলিম মোল্লা কুখ্যাত ডাকাত। সে মোটরসাইকেল চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে রংপুরে ডাকাতিসহ বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/93934