ছবি: যুগান্তর
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৭:০৫

চট্টগ্রাম কলেজ

ভেতরে পরীক্ষা বাইরে মুখোমুখি ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম কলেজে ঘোষিত কমিটিকে কেন্দ্র করে বিভক্ত কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কমিটি ঘোষণার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই পদবঞ্চিত ও পদধারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে। চলছে অস্ত্রের মহড়াও।

ভেতরে কলেজ ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে সন্তানদের ভেতরে ঢুকিয়ে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে অভিভাবকদের। সবশেষ গতকালও কলেজে øাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলার সময় ক্যাম্পাসের বাইরে ফের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় মিছিল আর পাল্টা মিছিলে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাস ও আশপাশে।
সূত্র বলছে, মূলত প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের সঙ্গে মেয়র নাছির উদ্দিন গ্রুপের মধ্যেই এ রেষারেষি। কথা হয় চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. একে ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে, এটা ঠিক। তবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি স্থগিত করার নির্দেশ সংক্রান্ত একটি খবরকে শেষপর্যন্ত গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন চট্টগ্রাম সফরে আছেন।
তিনিই নাকি কমিটি স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে রোববার। তবে ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের এমন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু।

তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজে ঘোষিত ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করার খবরটি সম্পূর্ণ গুজব। কেন্দ্র থেকে এখনও পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। তবে এ বিরোধ মেটাতে ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই চট্টগ্রাম সফর করবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
১৭ সেপেটম্বর রাতে চট্টগ্রাম কলেজ শাখার ২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে নগর ছাত্রলীগ। এতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
মাহমুদুল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের অনেকেই স্থান পাননি। নতুন কমিটিতে সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে আন্দোলন করছেন ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হক।
নাছির উদ্দীন অনুসারী আরও ছয়জন নেতা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এরা সবাই মেয়র নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কায় রোববার ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কলেজের প্রধান ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

চট্টগ্রাম কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার্থী অর্ণব দেব যুগান্তরকে বলেন, ‘কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের সৃষ্ট বিরোধে বিভিন্ন কলেজ থেকে চট্টগ্রাম কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ওই সব শিক্ষার্থী আমাদের কলেজকে নিরাপদ মনে করছেন না। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হোসনে আরা বলেন, ‘আমার মেয়ে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে স্নাতকে পড়ে। তার প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে চট্টগ্রাম কলেজে। পরীক্ষা দিতে কলেজে যখন যায় এরপর থেকে আতঙ্কে থাকি। কখন যে কী হয়? মেয়েটাকে নিয়ে ঠিকঠাক মতো বাসায় ফিরতে পারব কিনা- এসব চিন্তা করে সময় পার করি

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/93538