ছবি: সংগৃহীত
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৭:০৩

ব্যাংকিং খাতে সিএসআর ব্যয় অস্বাভাবিক

নানা প্রশ্ন, তদন্তের দাবি * ৬ মাসে খরচ ৬২৭ কোটি টাকা

ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ব্যাংকগুলো সিএসআর বাবদ ব্যয় করেছে ৬২৭ কোটি টাকা, যা এর আগের ছয় মাসে ছিল ৪১৭ কোটি টাকা।

সে হিসাবে গত ছয় মাসে ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় বেড়েছে ২১০ কোটি টাকা। হঠাৎ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খরচের খাত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ টাকার অপব্যবহার হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখার দাবি উঠেছে।
সাধারণত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, আয়বর্ধক কর্মসূচি ও অন্যান্য খাতে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু
এবার নির্বাচনী বছর হওয়ায় মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে সন্দেহ-সংশয় বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের অনেক চেয়ারম্যান এবং পরিচালক সিএসআরের অর্থ নির্বাচনী প্রচারে খরচ করছেন। কারণ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ব্যাংকের অর্ধশতাধিক পরিচালক ও চেয়ারম্যান অংশ নিচ্ছেন। তাই প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ব্যাংকের সিএসআরের অর্থ নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় প্রচার কাজে খরচ করছেন তারা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, সিএসআর খাতে ব্যয় বেশি হলে ক্ষতি নেই। তবে খতিয়ে দেখতে হবে এর কোনো অপব্যবহার হয় কি না। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দেখতে পারে।

একটি ব্যাংকের সাবেক এক এমডি যুগান্তরকে জানান, সিএসআরের নামে লুটপাট হয়েছে। আমার দীর্ঘ এমডি জীবনে ৬ মাসে ৬০০ কোটি টাকার অধিক সিএসআর
ব্যয় দেখিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনী বছর হওয়ায় যত্রতত্র ব্যয় বাড়ছে।
জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার শফিকুর রহমান বলেন, এ ব্যয় অস্বাভাবিক। প্রতিটি ব্যয় নিয়ম মেনে হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক অস্বাভাবিকভাবে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করেছে। ব্যাংকটি চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যয় করেছে ২৭৫ কোটি টাকা। এর আগের ছয় মাসে এ ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় ছিল মাত্র ৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির সিএসআর ব্যয় বেড়েছে ২২৮ কোটি টাকা। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেও হঠাৎ সিএসআরের ব্যয় বেড়ে গেছে। গত ছয় মাসে ব্যাংকটি ১ কোটি ১১ লাখ টাকা সিএসআর বাবদ ব্যয় করেছে, যা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংক এভাবে ব্যয় করেনি। এমন কি জনতা ব্যাংকেও এর আগের ছয় মাসে সিএসআরে ব্যয় ছিল মাত্র ৫ লাখ টাকা। ব্যাংকটির সিএসআরের টাকা নির্বাচনী প্রচারণায় খরচের অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, অস্বাভাবিকভাবে সিএসআর ব্যয়ের তালিকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের ৬ কোটি ২৯ লাখ থেকে বেড়ে ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, নতুন একটি ব্যাংকে ২ কোটি ২৪ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ১১ কোটি ৪০ লাখ থেকে বেড়ে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, এবি ব্যাংকে ৯ কোটি ৫ লাখ থেকে বেড়ে ১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা, যমুনা ব্যাংকে ৮ কোটি ৯১ লাখ থেকে বেড়ে ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ২ কোটি ৬৫ লাখ থেকে বেড়ে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ৯ কোটি ৬৭ লাখ থেকে বেড়ে ১০ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এক্সিম ব্যাংকে সিএসআর ব্যয় ২৫ কোটি ২৭ লাখ থেকে বেড়ে ৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা হয়েছে। এছাড়া দুটি ইসলামী ব্যাংকে যথাক্রমে ৩ কোটি ৮৯ লাখ থেকে বেড়ে ১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং ১২ কোটি ৩৩ লাখ থেকে ২১ কোটি ১০ লাখ টাকা সিএসআর ব্যয় হয়েছে। এর বাইরে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় ৪২ কোটি ২৭ লাখ থেকে বেড়ে ৪৯ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং এনসিসি ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় ৮ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বেড়ে ৯ কোটি ৬ লাখ টাকা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলোর মোট ব্যয়ের অন্তত ৩০ শতাংশ শিক্ষা ও ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এবার অধিকাংশ ব্যাংক তা মানেনি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে নিয়ম মেনে শিক্ষায় ব্যয় করেছে মাত্র ৮ ব্যাংক। আর স্বাস্থ্য খাতে খরচের নিয়মের মধ্যে রয়েছে ৫ ব্যাংক। যদিও ২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় এবার সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় করেছে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/93531