২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৭:০০

ব্যাংকের এসএমই ঋণ কমায় এনজিওর দিকে ঝুঁকছে উদ্যোক্তারা

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকগুলো এ খাতে মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার উদ্যোক্তাকে ৭৭ হাজার ৫১৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা কম। ওই সময়ে ৩ লাখ ৮৩ হাজার উদ্যোক্তাকে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছিল ৮৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। তবে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল ডিপার্টমেন্টের (জানুয়ারি-জুন ২০১৮) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এসএমই ঋণ কমায় বিনিয়োগে যেতে পারছে না নতুন উদ্যোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে অনেক ঋণ এসএমই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো চলতি বছর থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসা ঋণকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার কারণে এ খাতের ঋণ বিতরণ আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছে, বড় উদ্যোক্তারা উৎপাদনশীল খাতে বড় আকারের ঋণে এক অংক হার সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তা পাচ্ছে না।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণে এখনও সুদ হার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ। এজিওগুলো সহজেই ঋণ দিচ্ছে। কারন তারা একাউন্ট থাকলেই ঋণ দিয়ে থাকেন। শুরুতে ঋণ কম দিলেও ঠিক মত তা আদায় করলে পরবর্তিতে ঋণ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ব্যাংক থেকে তুলনামূলকভাবে কম সুদে ঋণ পাওয়া গেলেও তা পেতে অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ কারণেই এনজিওগুলোর ঋণের দিকে ঝুকছে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, কয়েকটি বড় বড় শিল্প ঋণে এক অংক সুদে ঋণ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সেই হারে ঋণ পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব ঋণের ক্ষেত্রে এই হার দ্রত কার্যাকর করতে হবে। এতে ছোট বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে উৎসাহ পাবে বলে জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকগুলোর মোট এসএমই ঋণের মধ্যে ব্যবসা উপখাতে ২ লাখ ৮১ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে ৩৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ব্যবসায় ৩ লাখ ৪ হাজার উদ্যোক্তাকে ৫৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ দেখানো হয়েছিল।
এ হিসাবে এবারে শুধু ব্যবসায় ঋণ কম দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। তবে উৎপাদন ও সেবা উপখাতে ঋণ বেড়েছে। উৎপাদনশীল খাতে এবারে ২৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ দেখানো হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ১৯ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ছিল। সেবা উপখাতে এবারে ১৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ দেখানো হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা বেশি।

তবে আলোচিত সময়ে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তা ও তাদের মধ্যে ঋণ বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে প্রায় ৭৯ হাজার নতুন উদ্যোক্তাকে এসএমই ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকার ঋণ। গত বছরের একই সময়ে ৭৫ হাজার উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করা হয় ১১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে সরকার এসএমই খাতে ঋণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিলেও ব্যাংকগুলো নানা অজুহাতে ঋণ দিতে গড়িমশি করছে। এতে করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে যেতে পারছেনা। বাধ্য হয়ে তারা নানা এনজিও ঋণে আটকে যাচ্ছে। এ ঋণ পরিশোধ করে তারা কোনভাবেই বেড় হতে পারছেনা।
সরকার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রশিক্ষিত হওয়ার পরেও ঋণ না পাওয়ার কারনে বিনিয়োগে যেতে পারছে না। তারা। এতে করে বেকারের সংখ্যা কোনভাবেই কমছেনা। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করতে হলে বেকারের সংখ্যার কমাতে হবে। তা না হলে কোনভাবেই মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবে না বাংলাদেশ।

জানা গেছে সারা দেশে বেসরকারি এনজিওগুলো কোন ধরনের জামানত ছাড়াই ঋণ বিতরন করছে। এবং এ ঋণ আদায়ের পরিমানও সন্তসজনক। এতে করে প্রতি বছরই তাদের ঋণ বিতরনের পরিমান বাড়ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো নানা অজুহাত দাড় করিয়ে এ খাতেকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এতে করে নতুন উদ্যাক্তারা বিনিয়োগে উৎস হারাচ্ছে।

http://www.dailysangram.com/post/346628