২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:২৫

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উদ্বেগ

স্বাক্ষর না করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি সিপিজের আহ্বান

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। বিলে সই না করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে তারা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠানোরও আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে সিপিজে।
গত শুক্রবার ফ্যাক্সযোগে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে সিপিজের এশিয়া প্রগ্রাম কো-অর্ডিনেটর স্টিভেন বাটলার বলেছেন, সংগঠনটি আশঙ্কা করছে, এই আইন বলবৎ হলে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার যে নিশ্চয়তা সংবিধান দিয়েছিল, তা খর্ব হতে পারে। এ ছাড়া সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাধারণ কার্যক্রম অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভয়াবহ ‘আইনি আপদ’ সৃষ্টি করবে।

সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধিতার মধ্যেই গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি পাস হয়। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলে বিলটি আইনে পরিণত হবে। এই আইনের কারণে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে এ নিয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি রয়েছে।

বিলটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে সিপিজের বার্তায় বলা হয়েছে, প্রণয়ন করা আইন সংসদে ফিরিয়ে এনে তা পুনর্বিচেনার যে সাংবিধানিক অধিকার রাষ্ট্রপতির রয়েছে, তা এই বিপদকে প্রশমিত করতে পারে। বিশেষ করে দেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা বারবার যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, তা আমলে নেওয়ার জন্য আইন প্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সিপিজে।

গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উদ্বেগগুলোও উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর সবচেয়ে উপদ্রবকারী ধারা, যা একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগ করা হয়েছে তা হলো ৪৩ ধারা। যে ধারায় পুলিশকে সমন ছাড়াই যে কাউকে এই আইনে গ্রেপ্তার করা বা তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই আইনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ঝামেলাপূর্ণ ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ ভালোভাবেই অবগত আছে যে পুলিশ ৫৭ ধারার অপব্যবহার করে আসছিল এবং তা রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত অবাধে গ্রেপ্তারের মতো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

সিপিজে আরো বলছে, অন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হলো ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে যুক্ত করায় তা তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের সম্প্রসারিত অংশ সাংবাদিকদের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
তা ছাড়া এই আইনে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা (সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা) এবং যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যা সাংবাদিকতাকে একটি অগ্রহণযোগ্য ঝামেলাপূর্ণ পেশায় পরিণত করবে। যার ফলে ভীতসন্ত্রস্ত গণমাধ্যম দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে না। এ ছাড়া ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো গুরুতর অপরাধের যে অস্পষ্ট বর্ণনা এই আইনে রয়েছে, তা নিয়েও একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিজে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/09/23/683162