২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৪

পুরনো স্টাইলে ফের মাদক কারবার

কমলাপুর বিআরটিসি কাউন্টারের সামনে দিয়ে ব্যাংক কলোনির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি আরামবাগে এসে মিলেছে, সেই রাস্তার বেশ খানিকজুড়ে পার্কিং করা থাকে বেশ কিছু গাড়ি। সন্ধ্যা হলেই এই গাড়িগুলোর আড়ালে বসে মাদকের আড্ডা। অনেক সময় গাড়ির ভেতরেই এই আড্ডা জমে যায়। এ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন বেশ পুরনো। মাঝে কিছু দিন ধরে পুলিশের ভয়ে আড্ডা জমেনি। এখন আবারো সেই পুরনো স্টাইলে মাদক কারবার ও মাদক সেবন চলছে। শুধু এই এলাকায়ই নয়; ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও আবারো ব্যাপক আয়োজনে শুরু হয়েছে মাদকের কারবার। রাজধানীর অন্তত ৩০০ স্পটে মাদক কারবার চলছে। কোন কোন এলাকায় আগের মতো প্রকাশ্যেই কেনাবেচা শুরু করেছে মাদক কারবারিরা। ঢাকার বাইরের মাদক কারবারিরাও আগের মতোই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে তাদের মহড়া অনেক এলাকায় লোকজনকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে সম্প্রতি কয়েক দফায় পরিচালিত অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে কয়েক শ’ মাদক কারবারি ও মাদকসেবী। তাই বলে থেমে যায়নি জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবার। অভিযানকালে কয়েকজন মাদক কারবারিও গ্রেফতার হয়েছে। তাদের অনেকে এখনো জেলে রয়েছে। কিন্তু মাদক নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েনি। পুরনো সব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই সেখানে চলছে মাদক কারবার। বন্দুকযুদ্ধে এ এলাকায় নিহত হয়েছে কুখ্যাত মাদক কারবারি নাদিম ওরফে পঁচিশ। জেনেভা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট আরশাদ, শাকিল, ছটু, মোক্তার ওরফে কেকড়া, মান্নান, মনসুর, মোটা কলিম, মিঠু ও পাঁচু, শওকত, টিপু, কানা স্বপন, বিহারি জাভেদ, লিপি, পান দোকানদার মুন্না, রমেশ ও গেদাদের মধ্যে অনেকেই অধরা। তাদের নেটওয়ার্ক সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের আশপাশে অন্তত ১০টি মাদক স্পট রয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ এলাকায় মাদক সেবনের দৃশ্য চোখে পড়ে। গতকাল বেলা ১১টায় দেখা যায় কমলাপুর আইসিডি থেকে শুরু করে স্টেশন পর্যন্ত ৩টি গ্রুপে গাজা ও ডান্ডি সেবন করছে। সেখানে দু’জন শিশু মাদকসেবীও রয়েছে। স্থানীয় একজন চা দোকানি বলেন, ওখানে প্রকাশ্যেই মাদক সেবন চলে। কেউ বাধা দেয় না। এমনকি পুলিশের চোখের সামনেই চলে মাদক ব্যবসা।

মগবাজার থেকে শুরু করে তেজগাঁও পর্যন্ত রেললাইনের পাশে এক সময় মাদকের পসরা নিয়ে বসত কারবারিরা। মাঝে কিছু দিন বন্ধ ছিল। এখন আগের মতো প্রকাশ্যে ডালা সাজিয়ে মাদক নিয়ে না বসলেও রেললাইনের পাশে খুঁজলেই মাদক পাওয়া যায়। গভীর রাত অবধি রেললাইনের পাশে বসে মাদক সেবনের দৃশ্য চোখে পড়ে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা আগে অভিজাত এলাকা হিসেবে গণ্য হতো। এখন প্রকাশ্যে সেগুনবাগিচার অলিগলিতে ইয়াবা কেনাবেচা চলে। প্রায়ই দেখা যায় ইয়াবা বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সেখানে মারামারির ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর মানিকনগরে মুগদা পুলিশ ফাঁড়ির অদূরেই চলে মাদক কারবার। সন্ধ্যার পরে পাওয়ার হাউজের পাশের কয়েকটি স্পটে প্রকাশ্যেই মাদক সেবনের দৃশ্য চোখে পড়ে।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকা কেরানীগঞ্জে রয়েছে ভিআইপি মাদক কারবারিরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশ পরিচালিত অভিযানের সময়ও ওই মাদক কারবারিরা এলাকায়ই ছিল। এদের অনেক রয়েছে যাদের দৃশ্যত ছোটোখাট ব্যবসা থাকলেও অন্তরালে রয়েছে বিশাল মাদক কারবার। স্থানীয় একজন প্রতিনিধি নয়া দিগন্তকে বলেন, এক মাদক কারবারি আছে, যার মা নিয়মিত এক পুলিশ অফিসারের বাসায় খাবার রান্না করে পাঠান। এলাকার মানুষের কাছে এটা বেশ হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। ওই মাদক কারবারিকে কেউ কখনো গ্রেফতারও করে না। মাদক কারবারি হলেও তার রয়েছে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র।
এ দিকে মাদক কারবারিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, মাদক কারবারিদের গ্রেফতারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/350898