২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৯

রফতানি আয়ের বিপর্যয়ে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে প্রকট সংকট

রফতানি আয়ে হঠাৎ বিপর্যয় নেমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে হঠাৎ করে এ বিপর্যয় নেমেএসেছে। আমদানি বাড়ছে আর রফতানি আয় কমছে আশঙ্কাজনক হারে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে। যা সার্বিক অর্থনীতিতে সংকট আরও ঘনিভূত করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একমাসের ব্যবধানে রফতানি আয় কমেছে ৩৭কাটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় তিন হাজার ৭১কাটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৩ টাকা)। গত আগস্টে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৩২১কাটি মার্কিন ডলার। অথচ গত জুলাইয়েও পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৫৮কাটি মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্টে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানে রফতানি আয় কমেছে ৪৩কাটি মার্কিন ডলার। গত আগস্টে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৩২১কাটি মার্কিন ডলারের। ২০১৭ সালের আগস্টে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৬৪কাটি মার্কিন ডলার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই রফতানি আয় দেশে আনছেন না। তারা পণ্য রফতানি করছেন ঠিকই, কিন্তু রফতানি আয়ের টাকা দেশে আনছেন না। তিনি উল্লেখ করেন, এভাবে দেশ থেকে টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশ থেকে অর্থপাচার হচ্ছে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ- এর সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদেশের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার কথা নয়। অবশ্য নির্বাচনের বছরে অসাধু অনেকেই রফতানি আয় দেশে নাও আনতে পারে। এ কারণে রফতানি আয় হয়ত কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি বেড়েছিল আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ওই মাসে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৫৮কাটি মার্কিন ডলারের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ জুনে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস তিন দশমিক ০৯ শতাংশ। একইভাবে মার্চ মাসেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুনে রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৩কাটি ৩০ লাখ ডলার। এই হিসেবে গত বছরের জুনের তুলনায় এই বছরের জুনে রফতানি আয় কমেছে ৯কাটি ৩৭ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫১ শতাংশ। দুই মাসে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৬ হাজার ৭৯৫কাটি মার্কিন ডলার।
এদিকে, রফতানিতে ধস নামার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও একলাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৮৬কাটি ৫৩ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় চার লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে সংশোধিত বাজেটের আকার কমিয়ে তিন লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
এদিকে রফতানি আয় কমে যাওয়া ও আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে রিজার্ভ বৃদ্ধির গতিটাই থেমেগছে। তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলারে (৩৩ বিলিয়ন) রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

http://www.dailysangram.com/post/346354