২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৩

আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

সাংবাদিকসহ অংশীজনদের আপত্তি উপেক্ষা করে পাস হলো বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল। এতে বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রাখা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেসি এ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৩২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা-১ এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুন:পুন: সংঘটন করেন তাহা হইলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এরপরই বিলটির ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনীর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরা। কন্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে ১৩টি দফার ওপর সংশোধনীর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির তিন এমপি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের ৪৩ দফায় দেয়া সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়। সংশোধনীর মাধ্যমে আইন শৃংখলা বাহিনী তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের অনুমতি নেয়ার বিধানটি বাতিল হয়। ফলে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের কোনো অনুমতির প্রয়োজন হবে না।

তারা হলেন-গাইবান্ধা-১ আসনের শামীম হায়দার পটোয়ারী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও ফখরুল ইমাম। তাদের প্রস্তাবে শব্দাবলী বর্জন, প্যারা, সংখ্যা ও বন্ধনী প্রতিস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়। বিলে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্রর ১২ এমপি। এ তালিকায় ছিলেন- নুরুল ইসরাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, বেগম রওশন আরা মান্নান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মোহাম্মদ নোমান। তারা ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য বিলটি পাঠানোর দাবি জানান। স্পিকার বিষয়টি কন্ঠভোটে দিলে তা নাকচ হয়। এরপর বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্রর ৮ এমপি। এ তালিকায় আছেন- নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, রুস্তুম আলী ফরাজী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার। নিজেদের মনোনীত ৩, ৪ ও ৫ সদস্যের বাছাই কমিটিতে বিলটি পাঠিয়ে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার দাবি তোলেন। কন্ঠভোটে তাদের সে প্রস্তাবও নাকচ হয়। এরপরই কন্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

বিলটি পাস করার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করা হয়। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় রয়ে গেছে বলে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে আগের মতোই।
প্রস্তাবিত আইনটিকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা পাস না করতে এক সপ্তাহ আগেও আহ্বান জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ।
গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর গত ৯ এপ্রিল তা সংসদে উত্থাপন করেন মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
আইনটি মন্ত্রিসভায় ওঠার পর থেকেই এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে সমালোচনা করে আসছে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এই আইনের ফলে ‘স্বাধীন’ সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।
খসড়া আইনটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটিকে প্রথমে চার সপ্তাহ দেয়া হলেও পরে দুই দফায় তিন মাস সময় বাড়িয়ে নেয় তারা। তবে শেষ দফায় এক মাস সময় নিলেও একদিনের মধ্যে দিন পরেই বৈঠক করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিলটি পরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই বিলটি পাস সংসদে পাস হয়েছে।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে দুই দফায় সম্পাদক পরিষদ, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি; তবে তাতেও উদ্বেগ প্রশমিত হয়নি।
সংসদীয় কমিটি প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সম্পাদক পরিষদ এক বিবৃতিতে বলে, “এই আইন স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ খসড়া আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ধারার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।

২০০৬ সালের তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা ছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের সময় থেকে সরকার তরফ থেকে বলা হয়েছিল ওই আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করে নতুন আইনে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হবে।
৫৭ ধারায় বলা ছিল, “কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷
কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদ-ে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬১ ধারায় বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বাতিল হবে। এসব ধরায় কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মালিক বা জিম্মাদারের অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ; কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কম্পিউটার সোর্স কোড, গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন, বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে উক্ত কোড, প্রোগ্রাম, সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করার শাস্তি; ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কম্পিউটার রিসোর্সের ক্ষতি-পরিবর্তন বা হ্যাকিং; ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কম্পিউটার, ই-মেইল বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, রিসোর্স বা সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনের চেষ্টার অপরাধের শাস্তি বলা হয়েছে।
৫৭ ধারার বিভিন্ন বিষয় পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে বিভিন্ন ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলের ৮ ধারায় ছিল, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমত, ব্লক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি অনুরোধ করতে পারবে।
ওই ধারায় আরও বলা হয়েছে, যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মনে হয় যে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেশের বা দেশে কোন অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকা-, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্নকরে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে তাহলে বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত ব্লক বা অপসারণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।

এই ধারায় পরিবর্তনের জন্য সম্পাদক পরিষদ সংসদীয় কমিটিতে প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে এখানে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশে এই আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিধানে শর্তাংশ যুক্ত করে বলা হয়েছে, “... তবে শর্ত থাকে যে তথ্য অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর বিধানবলি কার্যকর থাকিবে।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “সেকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ...”
বিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের আইনমন্ত্রী ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে ১৮ ধারায় কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকার বিধান ছিলো। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর এখানে শাস্তি কমিয়ে ছয় মাস কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার দণ্ডের বিধানের অংশে সংসদীয় কমিটির মতানুসারে ‘জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা’ যুক্ত করা হয়েছে।

এখানে শাস্তিও কমানো হয়েছে। আগে ১৪ বছরে জেল বা এক কোটি টাকা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান ছিল। এখন কারাদ- ১০ বছরের করার বিধান রয়েছে।
২৫ ধারায় বলা ছিলো, যদি কোন ব্যাক্তি ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করে যা আক্রমাণাত্মক, ভীতি প্রদর্শক বা কাউকে নীতি ভ্রষ্ট করে বা বিরক্ত করে; অপমান অপদস্ত বা হেয় করে; রাষ্টের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা বিভ্রান্ত করতে কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত করে প্রকাশ বা প্রচার করে তবে তা হবে অপরাধ।
এই ধারার চারটি উপধারাকে ছোট করে দুটি উপধারা করা হয়েছে। তবে মূল বক্তব্য প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অন্য কারও পরিচিত তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয় দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বা উভয় দণ্ড হবে।
একই অপরাধ বারবার করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থ দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
পরিচিত তথ্য বলতে বলা হয়েছে, বাহ্যিক, জৈবিক বা শারীরিক তথ্য বা অন্য কোনো তথ্য, যা এককভাবে বা যৌথভাবে একজন ব্যক্তি বা সিস্টেমকে শনাক্ত করে, যার নাম, ছবি, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, মায়ের নাম, বাবার নাম, স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নম্বর, আঙুলের ছাপ, পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ই-টিআইএন নম্বর, ডিজিটাল স্বাক্ষর, ব্যবহারকারীর নাম, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নম্বর, ভয়েজ প্রিন্ট, রেটিনা ইমেজ, আইরিস ইমেজ, ডিএনএ প্রোফাইল, নিরাপত্তামূলক প্রশ্ন বা অন্য কোনো পরিচিত যা প্রযুক্তির উৎকর্ষের জন্য সহজলভ্য।

২৮ ধারায় ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য শাস্তি কমানো হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলে ৭ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। পাস হওয়া জেল কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।

মানহানিকর তথ্য প্রচার নিয়ে ২৯ ধারায় পরিবর্তনের কথা সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলও সেখানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বিলে ৩১ ধারায় আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটে এমন তথ্য প্রচারের বিষয়ে পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখানেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
সংসদে উত্থাপিত বিলের ৩২ ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহলের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিলো। ওই ধারার ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সংসদীয় কমিটিতেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় সাংবাদিকরা।
সংসদে উত্থাপিত বিলের ওই ধারায় সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল।

এখানে সংসদীয় কমিটি পরিবর্তন করার সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ শব্দ উঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ‘অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করে বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
অর্থাৎ এখানে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ শব্দ উঠে গেলেও তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সংসদে উত্থাপিত বিলে এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

বিলে বলা, কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, “সাইবার তথা ডিজিটাল অপরাধের কবল থেকে রাষ্ট্র এবং জনগণের জান মাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য।”

http://www.dailysangram.com/post/346250