১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:০২

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন

মিয়ানমার সেনাদের পাশবিকতা মাপা কঠিন

গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে তাতমাদো (মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল নাম) যে পাশবিকতা ও নৃশংসতা ঘটিয়েছে, তা মাপকাঠিতে ‘পরিমাপ করা কঠিন’।

এ গণহত্যার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলমান অধিবেশনে প্রকাশ করা হয়। মিশনের প্রধান তদন্তকারী মারজুকি দারুসমান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
৪৪৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর চালানো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলকে মারজুকি জানান, ‘তাতমাদো অভিযানের নৃশংসতার পরিমাপ করা কঠিন। এটি প্রকৃতপক্ষে বেসামরিক নাগরিক জীবনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন।’ মিয়ানমারের শাসন প্রক্রিয়া এবং সরকারের ওপরেও প্রভাব বিস্তার করে আসছে সেনাবাহিনী।
দেশটির রাজনীতি থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সত্যানুসন্ধানী তদন্তকারীরা।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে দশকের পর দশক ধরে শাসন ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে সেনাবাহিনী। ২০১৫ সালে একটি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আংশিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন এখনও সেনা দখলে।

মন্ত্রিসভার তিন সদস্যও সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি স্থাপনায় একযোগে হামলার পর গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযান শুরু হয়। সেইসঙ্গে শুরু হয় এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট।
তিন সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন আগস্টের শেষে তাদের ২০ পৃষ্ঠার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে নৃশংস সেই দমন অভিযানের ভয়াবহতার চিত্র উঠে আসে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। আইন প্রয়োগের নামে ভয়ংকর ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করারও সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন।
এই মিশনের নেতৃত্ব দেন ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমান। সদস্য হিসেবে আরও ছিলেন শ্রীলংকার আইনজীবী নারী অধিকার বিশেষজ্ঞ রাধিকা কুমারস্বামী।
গত বছর গঠিত জাতিসংঘের এ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্যরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা ৮৭৫ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়ে, নথিপত্র, ভিডিও, ছবি এবং স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্র আরোপিত যে অবিচার চলছে তা প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়নের রূপ পাওয়ায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে এই জনগোষ্ঠীকে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/92001