১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৩

সীমাতিরিক্ত ঋণ ১৬ ব্যাংকের

আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষুণেœর আশঙ্কা

সীমাতিরিক্ত ঋণ বিতরণের অভিযোগ উঠেছে ১৬ বাণিজ্যিক এবং বিদেশী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ব্যাংকগুলোর এ আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ার পাশাপাশি আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সাথে ব্যাংকিংব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং জনগণের আস্থার সঙ্কট দেখা দেয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা এড়ানোর স্বার্থে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনের ১.৩.১ অনুচ্ছেদ অনুসারে একটি প্রচলিত ব্যাংক মোট আমানতের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষকেরা গত বছরের ঋণ আমানতের সমন্বিত বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত মাত্রায় ঋণ অমানতের অনুপাত নামিয়ে আনতে নির্দেশনা দেয়া হলেও ব্যাংকগুলো তা সংরক্ষণ করতে পারেনি। পাঁচটি ব্যাংক পর্যায়ক্রমে ঋণ আমানতের অনুপাত না কমিয়ে বরং দিন দিন বৃদ্ধি করেছে। একটি ব্যাংক ১০৬ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে শুধু ওয়ান ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অন্য ব্যাংকগুলোকে শুধু সতর্ক করা হয়। ৩১ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষকেরা দেখতে পান জরিমানার পর ওয়ান ব্যাংক ঋণসীমা নির্ধারিত অবস্থানে নামিয়ে আনতে পারলেও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণসীমা আগের চেয়ে বেড়ে যায়। যেমন, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত ছিল ৯০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ডিসেম্বরে তা না কমে বরং বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ দশমিক ৮২ শতাংশে। এ ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোরও ৩১ ডিসেম্বরের ঋণ আমানতের অনুপাত বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে ৩১ ডিসেম্বরে ১৬টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ আমানতের অনুপাত ছিল রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১০৬ শতাংশ, ফারমার্স ব্যাংকের ১০৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৮ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৯০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংকেরও ঋণ আমানতের অনুপাত আলোচ্য সময়ে বেশি ছিল।

ব্যাংকগুলোর এ আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাত চারটি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রথমত, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে এবং তা খেলাপি ঋণে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি তারল্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তৃতীয়ত, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। চতুর্থত, দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে আর্থিক সূচকের অবনতি হতে পারে।
এই অবস্থায় আর্থিক খাতে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রতিবেদনে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ওপর সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর তদারকি জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/350075