১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৬

নির্বাচন সামনে রেখে বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণে সতর্ক থাকার নির্দেশনা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে নতুন নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ নির্দেশনার আলোকে বড় বড় ঋণখেলাপির কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য চিঠি ইস্যু করাসহ ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এসব খেলাপির সাথে বৈঠক করতে বলা হবে। একই সাথে বলা হবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলো যেন নতুন করে বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে। একান্ত প্রয়োজন না হলে বড় ধরনের কোনো ঋণ যেন কাউকে অন্ততপক্ষে বছরের বাদবাকি সময় দেয়া না হয়। এ নির্দেশনার জন্য শিগগিরই অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে না যায় তার জন্য আমরা শিগগিরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করব। এ বৈঠক থেকে কিছু নির্দেশনা ও দেয়া হবে। এ নির্দেশনায় থাকবে নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলো যাতে বড় ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করে। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার অতীত রেকর্ডও খতিয়ে দেখতে হবে। একেবারে প্রয়োজন না হলে বড় ঋণ দেয়া যাবে না। অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অবস্থা বিদ্যমান রাখতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে। এর আগে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে যে টার্গেট দেয়া হয়েছিল তা আমরা খতিয়ে দেখব।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকায়। জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ যুক্ত হয়েছে খেলাপি হিসেবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের এক লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। ছয় মাস আগে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৩৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ছয় মাস আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

এ সময়ে সরকারি মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে পাঁচ হাজার ২৪১ কোটি টাকা, যা ব্যাংক দু’টির বিতরণকৃত ঋণের ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/350032