গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সন্দেহভাজনদের আদালতে আনা হলে স্বজনেরা ভিড় জমান। জজকোর্ট এলাকা, ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর। ছবি: সাজিদ হোসেন
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৪

আটক করে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানো!

আশ্রাব হোসেন রাজু পেশায় রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী। তিনি থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁর ছেলে পড়ে ঢাকা কলেজে। গত মঙ্গলবার ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় আসেন ব্যবসায়ী আশ্রাব। ছেলের সঙ্গে দেখা শেষে বুধবার কমলাপুর ট্রেন স্টেশনে যাওয়ার পথে আরামবাগ নটর ডেম কলেজের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মতিঝিল থানা-পুলিশ।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আজ আশ্রাবসহ ৭২ জনকে হাজির করা হয়। এর মধ্যে ৪৯ জনকে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। বাকিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতে পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মী। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার আসামিরা হামলা করেছে। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা দাবি করেছেন, রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ও মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আসামি আদালতের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক কর্মী নন। কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। পুলিশ রাস্তা থেকে তাঁদের ধরে এনে আসামি করেছে। এঁদের কয়েকজন আবার অসুস্থ।
নাসির মাহমুদ নামের একজনকে শাহবাগ থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠায়। পুলিশ বলছে, নাসির মাহমুদ বিএনপির একজন কর্মী। নাসির মাহমুদের ভাই কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই একজন দরজি। মিরপুর থেকে পুরান ঢাকায় যাওয়ার পথে সেগুনবাগিচা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার আজাদ উদ্দিন, সজীব হোসেন, আবদুর রহমান ও রিপনের আইনজীবীরা আদালতে লিখিতভাবে জানান, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী তাঁরা নন। তারপরও পুলিশ শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

তেজকুনি পাড়ায় থাকেন রিপন হোসেন। সেখানে তাঁর সেলুনের দোকান আছে। তাঁর বন্ধু লিটন মিঝি। তিনিও থাকেন তেজকুনি পাড়ায়। আর ১৯ বছর বয়সী লাল চান থাকেন নাখাল পাড়ায়। এই তিনজনের আইনজীবী জুয়েল আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই তিনজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। বুধবার তিনজনই পল্টন এলাকায় যান ঘুরতে। পুলিশ রাস্তা থেকে ধরে আদালত চালান দিয়ে বলছে, তিনজনই বিএনপির কর্মী। অথচ কোনো ঘটনার সঙ্গে এঁরা জড়িত নন।
গ্রেপ্তার অন্তত ১০ জনের পরিবারের সদস্যরা প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তাঁদের পুলিশ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে দেখা যায়, স্বজনদের ভিড়। অপেক্ষমাণ স্বজনদের বেশির ভাগই আগের দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রমনা ও শাহবাগ থানায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে, রমনা থানা-পুলিশ ২৬ জনকে এবং শাহবাগ থানা-পুলিশ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে।
রাজনৈতিক কর্মী না হয়েও কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন অভিযোগের বিষয়ে রমনা থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই রাজনৈতিক কর্মী। তদন্ত চলছে, যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগ পাওয়া না গেলে তাঁদের মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার আবেদন করা হবে।
সখিনা বেগমের ছেলের নাম রিপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে নিউমার্কেটের পাশে ফুটপাতের এক দোকানে চাকরি করেন। দোকানের জিনিসপত্র কেনার জন্য বের হয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।

কামাল সরকার দাবি করেন, তাঁর ভাই মাহবুব আলম এলাকায় পাইপের ব্যবসা করেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। অথচ দৈনিক বাংলা থেকে পুলিশ তাঁর ভাইকে ধরে নিয়ে রাজনৈতিক মামলা দিয়েছে।
ঢাকার আদালত, পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ১২ দিনে ঢাকা মহানগরের ৩২টি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে ৮৬টি মামলা করেছে। গ্রেপ্তার করেছে ১৬৯ জনকে। এর মধ্যে গত সোমবারই গ্রেপ্তার করা হয় ৭১ জনকে। বেশির ভাগ মামলা করা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার কারণে দণ্ডবিধিতে, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে, যা অজামিনযোগ্য। এসব মামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসামি করা হচ্ছে ঢাকা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের নাম উল্লেখ করে।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1557417