সর্বনাশা পদ্মার ভাঙন আরও ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। সময়ে সময়ে দিক পরিবর্তিত হয়ে পদ্মা আরও আগ্রাসী হয়ে হয়ে উঠছে। নদীর পানির তোড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নড়িয়া উপজেলার বাঁশতলা ও পাঁচগাঁও এলাকায় অন্তত ১৫টি পাকা বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীগর্ভে চলে গেছে শত শত গাছপালা ও কলার বাগান।
প্রতিদিনই সবহারা মানুষের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়িঘর ও জমি হারিয়ে অসংখ্য পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল। মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
হতভাগা মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতা ও সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কয়েকদিন ধরে এলাকায় অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামূল হক শামীম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদীতে প্রচুর স্রোত। নদীর গভীরতা এত বেশি যে, এ মুহূর্তে বেড়িবাঁধের কাজ করা সম্ভব নয়। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করা হবে।
ভাঙন ভয়াবহ হয়ে ওঠায় আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পদ্মার তীরের মানুষের ঘুম এক রকম হারাম হয়ে গেছে। অনেককে
উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তবে ভাঙন এলাকার দিক পরিবর্তিত হওয়ায় এখনও কোনো মতে টিকে আছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু অংশ। তবে তিন দিন আগে ধসে পড়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের যে অংশটি দাঁড়িয়ে ছিল সেটিও বুধবার রাতে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ঝুঁকিতে রয়েছে মুলফৎগঞ্জ বাজারের ৮ শতাধিক দোকান ও একটি ব্যাংকের শাখাসহ আশপাশের শত শত বাড়িঘর। স্থানীয়রা অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় তাদের বাড়িঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন।
এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ রয়েছে মুলফৎগঞ্জ বাজারসহ আশপাশ এলাকায়। সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল।
কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত মিহির চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। বিশাল বিশাল বাড়িঘর, দালানকোঠা বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। কমপক্ষে এক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভাঙনের মুখে। আরেক ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় শিরিন আকতার যুগান্তরকে বলেন, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বিলীন হওয়াতে আমাদের এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া না হলে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়বে। আবুল হাসেম বলেন, নদী আমাদের সবকিছু নিয়ে গেল। আমাদের আর কিছুই রইল না। আমরা এখন কোথায় যাব কি করব। কেমনে বাঁচব জানি না। আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।