১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:১৫

অর্থবছরের প্রথম মাসেই বাণিজ্য ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকা


আমদানির চাপে বেড়েই চলছে বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়ছে না রপ্তানি আয়। ফলে বাড়ছে বাণিজ্যের ঘাটতির পরিমাণ। এতে করে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা। তাদের মতে, দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে।

এ ছাড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে। তবে এই ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এই খাতেও তেমন আশানুরূপ গতি নেই। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাসে ইপিজেড সহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৫২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৪৭০ কোটি ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। সর্বশেষ জুলাই শেষে ২৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার (-) ঋণাত্মক হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরে ঋণাত্মক ছিল ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৮০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৫৫ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবাখাতে বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৪ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। এদিকে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে শেয়ারবাজারে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের আগস্ট মাসের চেয়ে ০.৫৩ শতাংশ কম। তবে অর্থবছরের প্রথম মাসের চেয়ে অর্থাৎ জুলাই মাসের চেয়ে ৭.১৪ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে ২৭২ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৭ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৫৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল বাংলাদেশে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=135789