১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:০৪

দেশে দৈনিক আত্মহত্যা করে ৩ জন

বছরে মারা যায় ১১ হাজার

বিশে^ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করছে। সারা বিশে^ বছরে আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। বাংলাদেশেও আত্মহত্যার ঘটনা কম নয়। ২০১৭ সালের পুলিশ প্রতিবেদন মতে, দেশে বছরে ১১ হাজার ৯৫ জন লোক আত্মহত্যা করে মারা যায়। আর প্রতিদিন তিনজন আত্মহত্যা করেছে ২০১৭ সালে। রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছরই দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। এ দেশে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করছে বিষ (কীটনাশক জাতীয়) পানে। গত বছর বিষপানে আত্মহত্যার এ সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৪৬৭। এরপরই রয়েছে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার হার। গত বছর ৫৬৯টি এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে দৈনিক ২৮ জন আত্মহত্যা করে থাকে। বছরে ১০ হাজার মানুষ বিষ খেয়ে অথবা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করছে বাংলাদেশে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে বছরে ১৯ হাজার ৬৯৭ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের ৬৫ লাখ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।
তবে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১৬ সালে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্য ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে বিশে^ যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে এর ৭৯ শতাংশ নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে হয়। বাংলাদেশের মতো বিশে^র অন্যান্য দেশেও বিষপান, ফাঁসি অথবা আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, মানসিক রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বিষণœতা, সিজোফ্রেনিয়া, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, মাদকাসক্তি, সারাক্ষণ যারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। তাদের মধ্যে আশাহীনতার সৃষ্টি হয়ে থাকে তীব্রভাবে। দুনিয়ার সব কিছু তারা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যেতে থাকলে এক সময় মুক্তির উপায় হিসেবে নিজেকে শেষ করে দেয় নিজের জীবন নিজের হাতে নিয়ে। এ ছাড়াও অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিলেও আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের গবেষণা অনুসারে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছে। প্রতি লাখে ৭.৩ জন আত্মহত্যা করছে। বয়স, লিঙ্গ, পেশা এবং ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে আট লাখ ১৯ হাজার ৪২৯ জনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে তারা এ তথ্য পেয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামে আত্মহত্যার হার ১৭ গুণ বেশি। গ্রামে যারা আত্মহত্যা করে তাদের বেশির ভাগ অশিক্ষিত ও দরিদ্র। অপর দিকে পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহত্যায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ১০ থেকে ১৯ বছরের বয়সী মেয়েরা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সংস্থাটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলোÑ কীটনাশক (বিষ), আগ্নেয়াস্ত্র এবং কিছু ওষুধ প্রাপ্তিতে কড়াকড়ি আরোপ করা, মাদক ব্যবহার নীতি কঠোর করা, মানসিক বিষাদগ্রস্ত রোগ, ক্রনিক পেইন (দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথা) ইত্যাদি সমস্যায় আগেভাগেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণীর মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যে তারা আত্মহত্যা প্রবণতা কমিয়ে আনার ব্যবস্থাপনার কৌশল রপ্ত করতে পারে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের মধ্যে সারা বিশে^ই ১০ শতাংশ আত্মহত্যা রোধ করতে অ্যাকশন প্লান নিয়ে কাজ করে আসছে ২০১৩ থেকেই।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/349465