১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৪

বিদেশের কারাগারে বাড়ছে বাংলাদেশীর সংখ্যা

অবৈধভাবে বিদেশে গমন, অবস্থান এবং ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে বিদেশের কারাগারগুলোতে বাংলাদেশীর সংখ্যা বাড়ছে। কোন রকমের সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ায় তারা কারা প্রকোষ্ঠের ভেতর মানবেতর জীবনযাপন করছে। কারাগারে আটকদের কেউ কেউ জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরছেন। আবার অনেকেই জরিমানার টাকা গুণতে না পেরে বছরের পর বছর বিদেশের কারগারে অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশনে নেমেছে দেশটির প্রশাসন। সেখানে যত অবৈধ লোক ধরা পরছেন তারা একটা বড় সংখ্যা বাংলাদেশী।
এর আগেও অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দেশটির প্রশাসন। প্রতিটি অভিযানেই আটক হওয়া জেল জরিমানার শিকার হওয়াদের বড় একটা সংখ্যা বাংলাদেশী বলে জানা যায়। মালয়েশিয়ায় প্রশাসনের অভিযানে ধরা পড়াদের অনেকেই জেলখানায় আছেন। আর যাদের সামর্থ্য আছে তারা জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। মালয়েশিয়ার কারাগারগুলোতে হাজার হাজার বাংলাদেশী রয়েছে বলে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ার সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা সমুদ্র পথে অনুপ্রবেশ করেছেন তারা কেউ বৈধতা পাবেন না। যারা স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে তারাও বৈধতা পাবেন না। এছাড়া যারা সিক্সপিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং অনলাইন হয়েছে তারা কেউ বৈধতা পাবেন না।
প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ অবৈধ বিদেশী শ্রমিক আছে। এরমধ্যে বাংলাদেশী তিন লক্ষাধিক। এই অবৈধদের বেশিরভাগই ওপরের ওই তিন ক্যাটাগরির লোক। মালয়েশিয়ান সরকার যদি সিদ্ধান্ত না বদলায় তাহলে ওরা কেউ ‘বৈধ’ হতে পারবেন না। সব শর্ত পূরণ করার পর অবৈধদের মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশী ‘বৈধতা’ পাবে না। ভূক্তভোগীরা বলছেন, পারমিটের নামে বাংলাদেশী শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। দালাল তাদের পারমিট করে দেবে বলে দুই তিন হাজার রিংগিত নেয়। তারপর পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয়।

সম্প্রতি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ওমানে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশীকে আটক করেছে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই বলে জানিয়েছে ওমানে জনশক্তি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশী ছাড়াও আরও ৭ হাজার বিদেশীকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আটকদের মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৫৭, পাকিস্তানি ৩ হাজার ২৮৫ ও ভারতীয় শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৫ জন। আটকদের সামাইল সেন্ট্রাল জেলখানায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের কবে দেশে পাঠানো হবে কেউ জানে না।
এদিকে গত বছর ওমানে অবৈধভাবে বসবাসের জন্যে যে ২৭ হাজার বিদেশী শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে দেশটির শ্রম আইন ভঙ্গের। এদের কাছে কোনো বৈধ কাগজ পত্র নেই। গ্রেফতারকৃতদের এক তৃতীয়াংশই বাংলাদেশী বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আরব বিজনেস।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৫৭, পাকিস্তানি ৩ হাজার ২৮৫ ও ভারতীয় শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৫ জন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫’শ বিদেশী শ্রমিক ওমানের শ্রম আইন লঙ্ঘন করছেন বা তাদের কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। ওমানের স্থানীয় সংবাদপত্র এ খবর দিয়েছে। ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অব ওমান বলছে গত বছর ২৭ হাজার ৮৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মাস্কাটে ৮ হাজার ৯২৩, উত্তর বাতিনাহ’তে ৬ হাজার ৯১৮, ধোফারে ৩ হাজার ১৭ ও দক্ষিণ বাতিনায় ১ হাজার ৭৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের ৭৬.৬ ভাগই বাংলাদেশী। গ্রেফতারকৃতদের অর্ধেককে ওমানের শ্রমআইন লঙ্ঘনে চাকরিচ্যুত করা হয়। এদের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৬ জন টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ওমানে গিয়েছিলেন।
এদিকে সৌদি আরবের জেদ্দা, দাম্মামসহ বিভিন্ন কারাগারে অবৈধভাবে অবস্থান করাসহ নানা অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশী বন্দী হয়ে আছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে অনেকে কারামুক্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে আইনি জটিলতার কারণে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

সৌদি আরবে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে জানিয়েছেন, আমরা এদেশে এসে অনেক কষ্টে আছি। ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নবায়ন না হওয়ায় পুলিশি অভিযানে শত শত বাংলাদেশী ধরা পড়ে জেলে আছে। কেউ কেউ নানা অপরাধ করে আটক আছে। তবে এদের মধ্যে অনেকে আবার আউট পাসে দেশেও ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও ঢাকায় দালালদের খপ্পরে পড়ে এখনো লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে শ্রমিক আসছেন। অসহায় শ্রমিকদের একটি অংশ প্রতিদিন নানা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

 

http://www.dailysangram.com/post/345506