১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৭

উচ্চ মূল্যের এলএনজি যাচ্ছে অবৈধ সংযোগে

কর্ণফুলীতে ১০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগে বছরে অর্থ লোপাট ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে * সার্ভিসলাইন নির্মাণ নিয়ে বিশেষ কমিটি ও পেট্রোবাংলার ঠাণ্ডা লড়াই

অবৈধ সংযোগ ও গ্যাস চুরি বন্ধ না করে আমদানি করা উচ্চ মূল্যের এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) দেয়া হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানি কর্ণফুলীতে। স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানে কর্ণফুলীতে কমপক্ষে ১০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
এছাড়া কখনও বাইপাস লাইন করে, কখনও বা মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল)।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে গ্যাস চুরি অব্যাহত থাকলে বছরে ১০০ কোটি টাকার এলএনজি চলে যাবে অবৈধ গ্রাহকদের কাছে। অথচ শুধু একটি ‘সরকারি আদেশেই’ এই উচ্চ মূল্যের এলএনজি বিক্রি করা সম্ভব হতো বৈধ গ্রাহকদের কাছে।
খোদ পেট্রোবাংলার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, সংযোগের অনুমোদন পাওয়া যেসব কোম্পানির আঙিনা পর্যন্ত বিতরণ বা সার্ভিস লাইন নেই সরকার যদি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এই লাইন নির্মাণ করার সুযোগ দিত তাহলে এলএনজি নিয়ে আজকের এই ভয়াবহ কেলেঙ্কারিতে পড়তে হতো না।
সূত্র জানায়, গ্যাস চুরির অপরাধে চট্টগ্রামে গত আগস্টে শিল্প, আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের ৪৬০টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আদায় করা হয় ৩০ লাখ টাকা জরিমানা। কিন্তু বাস্তব অবস্থার বিপরীতে এ চিত্র কিছুই না।
কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপক ও একটি ভিজিল্যান্স টিমের প্রধান আবুল কালাম আজাদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানি ও সরবরাহের পরও এ ধরনের চুরি অব্যাহত থাকলে সরকারের লোকসানের বোঝা আরও ভারি হবে। তাই চুরি রোধে কোম্পানিকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
এদিকে সাগরে এলএনজিবাহী জাহাজ ভিড়ে যাওয়ার পর এখন পেট্রোবাংলাসহ সংশ্লিষ্টরা চোখে-মুখে তাই শর্ষে ফুল দেখছে। কোনো উপায় না পেয়ে এখন ২৭ টাকা দামের প্রতি ইউনিট এলএনজি ৭ টাকা দামের প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে।
ওদিকে নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণ নিয়ে পেট্রোবাংলা ও বিশেষ কমিটির মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। বিশেষ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণ করার অনুমতি প্রদানের জন্য ১৪ জুন পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে।
অপরদিকে পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বিশেষ কমিটির নির্দেশনার মধ্যে নানা রহস্য রয়েছে। এ কারণে এই চিঠির আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এ পরিস্থিতিতে নামমাত্র গুটিকয়েক কোম্পানি ছাড়া আর কাউকে অনুমতি দেয়া সম্ভব হবে না।
অথচ আগে থেকে বলা হচ্ছিল, গত মার্চ মাস থকে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এটি ১০০ কোটিতে উন্নীত করা হবে। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, লুটপাট, ঘুষ বাণিজ্য, আর এলএনজি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যকে ভূলুণ্ঠিত করতেই গত ৭ মাস পরও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১০ কোটি ঘনফুট।
যদিও গত সোমবার থেকে এটি ২৫ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে। জানা গেছে, পাইপলাইন না থাকায় বাকি ২৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির অধীনে থাকা হাজার হাজার অবৈধ সংযোগে উচ্চ মূল্যের এলএনজি দিতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে।
সূত্র জানায়, ১৪ জুন বিশেষ কমিটির এক সভায় গ্রাহক অর্থায়নে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ তথা সার্ভিসলাইন নির্মাণের মাধ্যমে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী পেট্রোবাংলাকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

কিন্তু গত ৩ মাসেও পেট্রোবাংলার ওই সিন্ডিকেট এই প্রস্তাবনা পাঠাতে পারেননি। অভিযোগ আছে, একতরফাভাবে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিকে এলএনজি প্রদানের জন্য এরকম গড়িমসি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক যুগান্তরকে জানান, উপদেষ্টার চাপে গত ৩ জুলাই পেট্রোবাংলা একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। কিন্তু সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে মাত্র ২ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন নির্মাণ বিবেচনা করা যেতে পারে বলে জানানো হয়। অথচ বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিস লাইন নির্মাণকারী শিল্প গ্রাহকদের আবেদন জমা আছে প্রায় ২ হাজার। যাদের অধিকাংশরই গ্যাস পেতে হলে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পাইপ লাইন নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। এই অবস্থায় পেট্রোবাংলা থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত পাইপ লাইন বা সার্ভিস লাইন তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে প্রস্তুত করা প্রস্তাবনা রহস্যজনক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যের এলএনজি যাতে শিল্প গ্রাহকরা না পায় সেজন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এ রকম ফাঁদ পাতা হয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীদের সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটও জড়িত। এজন্য ওই সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকা খরচ করে জ্বালানি সেক্টরে বড় বড় লবিস্ট নিয়োগ করে রেখেছে বলেও জনশ্র“তি আছে।
এদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে ও অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এইসব অভিযানে গত ৩ মাসে ১৭শ’ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার কিলোমিটার অবৈধ লাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রামে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা ৭ থেকে ১০ হাজার। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বিশেষ করে প্রভাবশালী শিল্প প্রতিষ্ঠান, সিএনজি স্টেশনসহ শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের অনেকে এই চুরির সঙ্গে জড়িত। কেজিডিসিএলের ঠিকাদার, অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই চলে চুরির এই মহোৎসব। সরকারি গ্যাস চুরি করে তারা নিজেদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারা করে।
এই যখন অবস্থা তখন এলএনজি আমদানি ও সরবরাহ শুরুর পর শিল্প খাতের ৬৭৯টি আবেদনের মধ্যে ৬৭৬টি আবেদন গ্রহণ করে সংযোগ প্রদানের অনুমতি প্রদান করা হলেও সবগুলোতে সহসা মিলছে না গ্যাস।

কারণ এসব শিল্প কারখানায় গ্যাস পৌঁছানোর জন্য সার্ভিস লাইন স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপনে সময়ক্ষেপণ করছে কেজিডিসিএল। এর মধ্যে ২৭৫ জন গ্রাহকের বিপরীতে ইস্যু করা হয়েছে ডিমান্ড নোট। এসব গ্রাহক ১৮০ কোটি টাকা জামানতও প্রদান করেছে।
এসব শিল্প-কারখানায় এরই মধ্যে সংযোগ প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগে থেকেই যদি গ্যাস সরবরাহের জন্য সার্ভিস লাইন বা পাইপলাইন স্থাপন করা হতো তবে এই সময়ক্ষেপণ হতো না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।এ জন্য পেট্রোবাংলা ও কেজিডিসিএলের খামখেয়ালিপনা এবং অবহেলাকেই দায়ী করা হচ্ছে।
তবে কেজিডিসিএলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তারাই বিশেষ কমিটির অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর আঙ্গিনা পর্যন্ত সার্ভিস লাইন নির্মাণ করার অনুমতি দিতে পেট্রোবাংলাকে অসংখ্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা থেকে কোনো সদুত্তর পায়নি। খোদ চট্টগ্রামের অনেক শিল্প গ্রাহক তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এসব সার্ভিস লাইন নির্মাণ করতে চাইলেও তাদের অনুমতি দেয়নি পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, বিশেষ কমিটির অনুমোদন পাওয়া কমপক্ষে ২ হাজার কোম্পানির আঙ্গিনা পর্যন্ত বিতরণ বা সার্ভিস লাইন নেই। এসব সার্ভিস লাইন নির্মাণের অনুমতি দেয় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ কমিটি। ভুক্তভোগীরা এই কমিটির কাছে অসংখ্যবার চিঠি দিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি। বেশ কিছুদিন আগে বিশেষ কমিটির এক সভায় এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে দেখা গেছে বৈঠকের রেজুলেশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি গায়েব করে দেয়া হয়েছে। রহস্যজনক কারণে পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্চ করেনি।
বিশেষ কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ কমিটি গত ১৪ জুন নিজস্ব অর্থায়নে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ তথা সার্ভিস লাইন নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য পেট্রোবাংলাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে পেট্রোবাংলাই পুরো অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার জন্য দায়ী। তার মতে কে বা কারা বিশেষ কমিটির এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি তাকে শনাক্ত করে দুদকের হাতে তুলে দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে কঠোর মামলা করতে হবে। একই সঙ্গে যাদের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার এলএনজি এখন চুরি হচ্ছে ওই টাকা তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
এ খাতের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকসহ সবশ্রেণীর গ্রাহককে দেয়া হচ্ছে আমদানি করা উচ্চমূল্যের এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস)। এই এলএনজিও যদি অতীতের মতো চুরি হয় তবে সরকারকে শত শত কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। আবার যেসব শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহক শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছে তারাও প্রয়োজনীয় গ্যাস পাবে না। এতে করে উভয় সংকট সৃষ্টি হবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পেট্রোবাংলা বা কেজেডিসিএলকে ঢেলে সাজাতে হবে। এসব সংস্থায় ঘাপটি মেরে থাকা সরকারের স্বার্থবিরোধী ও নিজেদের আখের গোছানো লোকজনকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় সরকারকে চড়া মাশুল দিতে হবে।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে বাখরাবাদ থেকে পৃথক হয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিল) নামে নতুন কোম্পানি গঠনের এক বছর ৭ মাসের মধ্যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বাইপাইস লাইন ও মিটার টেম্পারিং করে কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরি করা হচ্ছিল।
এ ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল। বায়েজিদ স্টিল, প্রোভিটা ফিডসহ বড় বড় শিল্প গ্রাহকের এই চুরি ধরতে গিয়েই কোম্পানির তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা এমডি প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েন। এক বছর সাত মাসের মাথায় তাকে সুকৌশলে বিতাড়িত করে গ্যাস চুরির পথ সুগম করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, চুরি অব্যাহত থাকায় একদিকে সরকারকে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে, অন্যদিকে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাস পাওয়ার আশায় শিল্প খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও সংযোগ না পেয়ে বছরের পর বছর তাদের অলস বসে থাকতে হয়েছে। ব্যাংকের কাছে হতে হয়েছে দেউলিয়া। অথচ ব্যাংকে তাদের দেউলিয়া হওয়া বা দেনাদার হওয়ার করুণ ইতিহাস কেউ জানে না।

চট্টগ্রামের এসএ গ্রুপের কর্ণধার এম শাহাবুদ্দিন আলম যুগান্তরকে বলেন, তিনি লবণ কারখানা, পেপার মিল, কনডেন্স মিল্কসহ ৭টি কারখানায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আশ্বাসে তিনি চট্টগ্রামে এসব কারখানা স্থাপন করলেও দশ বছর ধরে গ্যাসের জন্য হাহাকার করেছেন। ঘুরেছেন পেট্রোবাংলার দ্বারে দ্বারে। কারও কোনো রেসপন্স পাননি। বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ বা ডিজেল দিয়ে তাকে কারখানা চালাতে হয়েছে। অন্যথায় আমদানি করা শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যেত। এটি করতে গিয়ে তাকে শত শত কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। ব্যাংকের কাছে হয়েছেন দেউলিয়া। অথচ গ্যাস না পাওয়ার দুঃখের কাহিনী কেউ শোনেনি। শুনতে চায়নি। পেট্রোবাংলা এবং কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তাদের কাছে সার্ভিস লাইন স্থাপন, গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য ধরনা দিয়েছেন বছরের পর বছর। কিছুতেই কিছু হয়নি।
তবে বর্তমানে এলএনজি আমদানির পর তার সবগুলো কারখানায় গ্যাস সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান। তবে উচ্চমূল্যের এই গ্যাস যাতে যথাযথ ব্যবহার হয়, চুরি রোধ হয় সে বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চমহল থেকে জোরালো মনিটরিং প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
ভুক্তভোগী বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ করেছে, পরবর্তীতে কেজিডিসিএল এ এমডি হিসেবে আইয়ুব খান চৌধুরী (বর্তমানে পেট্রোবাংলার পরিচালক, প্ল্যানিং) যোগ দিলেও তিনি শিল্প গ্রাহকদের গ্যাসের জোগান দেয়ার পরিবর্তে ছিলেন কেজিডিসিএল’র অভ্যন্তরীণ বদলি, নিয়োগ বা চাকরি খাওয়া এবং নিজের দুই ছেলেকে চাকরি দেয়ার বাণিজ্যে।
জামায়াত ঘরানার লোক হয়েও তিনি পেট্রোবাংলায় যেমন দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন তেমনি কেজিডিসিএলএ এমডি থাকার সময়ও এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেন। কেজিডিসিএল’র নামে ইউনুসকো থেকে জায়গা ক্রয়ে ২৭ কোটি টাকা কৌশলে আত্মসাতেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে, যা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।

কেজিডিসিএল’র এক সহকারী প্রকৌশলী যুগান্তরকে বলেন, ডিএম (ডেপুটি ম্যানেজার) পদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় ৭ নম্বরে তার নাম আসে। কিন্তু ওই সহকারী প্রকৌশলীকে ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আইয়ুব খান তার ছেলে আশিক উল্লাহ চৌধুরীকে নিয়োগ দেন। ৯ ও ১০ নম্বরে যাদের নাম এসেছে তাদেরও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কারণে ওই সহকারী প্রকৌশলী হাইকোর্টে একটি রিটও করেন। এমডির কথা মতো অন্যায় আবদার রক্ষা না করায় আমির হামজা নামে এক ডিজিএমকে প্রথমে বরখাস্ত করে পরে ডিমোশন দিয়ে ফৌজদারহাটে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত অন্তত ৪০ জন কর্মচারীকে কোনো কারণ ছাড়াই বের করে দিয়ে নতুন করে একেকজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা করে নেয়া হয়। নেছার আহমদ নামে একজন ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে তিনি গ্যাস সংযোগ বাণিজ্য করেছেন। যার বিরুদ্ধে মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড থানায় মামলা হয়। নতুন লাইন স্থাপনের সময় উত্তোলন করা পুরনো পাইপগুলো বিক্রি করে সেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ এসব মামলা করে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/89799