১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৮:৫৫

দেড় লাখ ইভিএম কেনা চূড়ান্ত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে চলছে যখন আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তখনি দেড় লাখ সেট ইভিএম কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তিন হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২৯ কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ের সেই ইভিএম কেনার প্রকল্পটি আগামী মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিশ্চিত করেছেন। প্রতিটি ইভিএম ক্রয়ে ব্যয় হচ্ছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনে মূল্যায়ন কমিটিতে (পিইসি) গতকাল প্রকল্পটি আলোচনা করা হয়।
জানা গেছে, কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতের সভাপতিত্বে এই সভা হয়। জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে দেড় লাখ ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত তিন হাজার ৮২৯ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ প্রকল্পটির ওপর গত ১৯ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্যের সভাপতিত্বে পিইসি সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যেকোনো কারণে সভা স্থগিত করে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এ প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেই পিইসি সভার ওপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু এ প্রকল্পটি নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ অনেক কিছু স্পষ্ট না করেই কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অসঙ্গতির কারণেই পিইসির সভা স্থগিত করা হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিও সংশোধনের প্রায় দুই মাস আগে গত ৫ জুলাই ইভিএমের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নেয় ইসি। তবে প্রকল্প পাস না করে সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগে এটি নিয়ে তোড়জোড় করায় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠে।
প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসি থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইভিএম যুক্ত হলে সামগ্রিক ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্র সমুন্নত হবে বলে ইসি প্রস্তাবে উল্লেখ করে। দেড় লাখ সেট ইভিএম কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও তিন হাজার ১১০ জনকে ইভিএমের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে ব্যয় হবে পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ব্যয় হবে এক কোটি টাকা। কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনার জন্য ব্যয় হবে ৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অপ্রত্যাশিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ছয় কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইভিএম প্রকল্প সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না সেটি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। আমরা শুধু প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছি। তাছাড়া একবারে পুরো বরাদ্দের টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। বছর বছর অর্থ ছাড় করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে এটি ব্যবহার করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) পরিবর্তন করতে হবে। সেটির প্রক্রিয়া চলছে। এক সময় সব নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে এই ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের মতামত রয়েছে।
তিনি বলেন, আরপিও সংশোধন হলে তার ব্যবহার ইসির ওপর নির্ভর করছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে যদি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা হবে সীমিত আকারে। সব কিছুই নির্ভর করছে ইসির ওপর।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইযের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ এটি এখন বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলসি খোলা হয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই। তবে প্রকল্পই অনুমোদন হয়নি। প্রকল্প ছাড়া কিভাবে এলসি খোলা হয়? এ ছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এই প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রম অনুমোদনের পরই এলসি হওয়ার নিয়ম।
পিইসি সভার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতের সাথে ফোনে রাতে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় তিনি বাসায় নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/348354