১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:৩২

মৃত ব্যক্তিকে আসামি করে পুলিশের মামলায় তোলপাড়

ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় আসামি করা হয়েছে মৃত ব্যক্তিকে। ঘটনার ২৮ মাস আগেই যিনি মারা গেছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন কেউ শুনেননি বিস্ফোরণের শব্দ। দেখেননি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা পুলিশের ওপর
হামলার কোনো দৃশ্য। রাজধানীর চকবাজার থানায় দায়েরকৃত এরকম দুটি মামলা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সর্বত্র। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ই সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালত বসানোকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হন।

এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছেন তিনি। বেলা ১১টার দিকে বেচারাম দেউড়ি আজগরি মঞ্জিলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
একপর্যায়ে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এতে চকবাজার থানার এসআই কামাল উদ্দিনসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এই হামলায় যারা নেতৃত্ব দেন তাদের মধ্যে অন্যতম বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, চকবাজার থানা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ উল্লাহ, নাজিম উদ্দিন ও চান মিয়া। অথচ আজিজ উল্লাহ মারা গেছেন ২০১৬ সালের মে মাসে। এই মামলার আরেক আসামি চান মিয়া ৪ঠা আগস্ট হজ করতে সৌদি আরবে যান। তিনি এখনও ফিরেননি।

শুধু আসামি করার ক্ষেত্রে না, প্রশ্ন উঠেছে ঘটনা নিয়েই। ওই এলাকার বাসিন্দারা এই মামলাকে আষাঢ়ে গল্প বলে আখ্যায়িত করছেন। তারা মনে করছেন রাজনৈতিক নোংরামির ফসল হচ্ছে এই মামলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার বাসিন্দা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত এক তরুণ বলেন, এরকম ঘটনা ঘটলে আমরা জানতে পারতাম। সেদিন সংবাদিকরাও ছিল। তারাও জানতেন। কিন্তু কেউ জানে না। শুধু পুলিশ জানে।
নাজিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা আকমল হোসেন জানান, কারাফটকের উল্টোদিকের গলির ভেতরে তার ছোট একটি দোকান রয়েছে। ৫ই সেপ্টেম্বর সেখানেই বসা ছিলেন তিনি। সেদিন সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন ছিল ওই এলাকায়। গলির ভেতরের দোকান ছাড়া আশপাশের দোকান বন্ধ ছিল। এরকম কোনো ঘটনা সেদিন ঘটতে দেখেননি। ঘটেছে বলেও শুনেননি।

গতকাল দুপুরে ওই এলাকার একটি চায়ের দোকানে এই মামলা নিয়েই কথা হচ্ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। বয়স্ক এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওরা মরা মানুষটাকে জিতা বানাইছে। হে নাকি ককটেল ফাটাইছে। এসবইতো ঘটতাছে। এতদিন জিতা মানুষ ধরছে, এখন মরা মানুষ ধরবো! হেরা সব পারে।’ নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম বইলা আমিও আসামি হব নাকি।’ এলাকার ১২ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরকম কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি।
তবে ঘটনা ঘটেছে সত্য দাবি করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীমুর রশীদ তালুকদার বলেন, ৫ই সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতকার্মীরা জড়ো হয়েছিল। বেচারাম দেউড়ি আজগরি মঞ্জিলের সামনে তারা অবস্থান নেয়। এ সময় তারা মিছিলও করেছে। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ককটেল ছুঁড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মৃত ব্যক্তি আজিজ উল্লাহ কিভাবে ককটেল ছুঁড়লেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, এটা ভুল হয়েছে। আজিজুল নামে বিএনপির ওই এলাকার এক কর্মীকে আসামি করতে গিয়ে ভুলে আব্দুল আজিজ উল্লাহর নাম, ঠিকানা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও চান মিয়ার বিষয়ে তিনি জানান, এটাও ভুল। তদন্ত প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য দেয়া হবে। এই মামলার বাদী হয়েছেন চকবাজার থানার এসআই কামাল উদ্দিন। এজাহারের অভিযোগ অনুসারে সেদিন তিনি আহত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জি, আহত হয়েছিলাম। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোথায় আঘাত পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ডাক্তার বলতে পারবে কোথায় আঘাত পেয়েছি। আমি বলতে পারব না। বলেই লাইন কেটে দেন তিনি। তার আগে মামলায় মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করি। সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি। ভুল ক্রুটি হতে পারে।

একইভাবে ৩রা সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা করা হয়েছে চকবাজার থানায়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে ১৪ই আগস্ট রাতে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে এজাহারনামীয় ৩৯ ও অজ্ঞাত ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার চার নম্বর আসামি বিএনপি নেতা খতিবুর রহমান হজ পালন করতে ১০ই আগস্ট থেকে সৌদি আরবে রয়েছেন। কিন্তু মামলায় আজগরি মঞ্জিলের সামনে পুলিশের ওপর হামলায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ওই এলাকার লোকজন কেউ দেখেননি এরকম কোনো ঘটনা ঘটতে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=134780