১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:৩০

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গলদঘর্ম অবস্থা

বুধবার বিকাল ৩টা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশ থেকে এক ব্যক্তি রাস্তা পারাপার হবেন। একাধিকবার চেষ্টাও করেছেন। কদম ফোয়ারা থেকে পল্টনমুখী গাড়িগুলো একের পর এক দ্রুতবেগে আসছিল। একশ’ গজ দূরেই ফুটওভারব্রিজ। সেটা ব্যবহার না করে রাস্তা পার হবেন ওই ব্যক্তি। ওভারব্রিজ ব্যবহার করার পরামর্শ দিলে মুচকি হেসে তিনি চটজলদি রাস্তা পার হলেন। রাজধানীসহ সারা দেশে যখন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্কাউট সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যস্ত তখন এমন অনেকে নিত্য আইন অমান্য করে চলাফেরা করছেন।
গতকাল সকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় স্কাউট সদস্যরা পথচারিদের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে সহযোগিতা করছিলেন। নিচে সড়ক দিয়ে পারাপার হওয়া পথচারিদের সঙ্গে তাদের অনেককে বচসা করতে দেখা যায়। নিয়ম ভেঙে কাউকেই সড়কে চলতে দেয়া হয়নি।

এদিকে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো অধিকাংশ যানবাহন নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। মোবাইল কোর্ট, পুলিশ চেকপোস্টের সামনে সতর্ক থাকলেও পুরো সড়কজুড়ে আগের নিয়মেই তারা গাড়ি চালাচ্ছে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে রাজধানীর সড়কে গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেলেও এখনো চলছে ফিটনেসবিহীন বাস ও মিনিবাস। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের আগে থেকেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই। ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে সারা দেশে যেভাবে সাড়া পড়েছিল, এখন তার সবই ম্লান হওয়ার পথে। কাগজপত্রবিহীন গাড়ি না ধরার জন্য আবার আগের মতোই পুলিশের ওপর প্রভাবশালীদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে যাত্রীদের সচেতনতা মোটেও বাড়েনি। যাত্রীরা সচেতন না হলে পুলিশ একা কি করবে? সব মিলে গণপরিবহনে আগের মতোই বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ ও স্কাউটের সদস্যরা নিয়মিত কাজ করলেও পথচারিদের অনেকেই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না।

বিশেষ করে রাজধানীতে চলাফেরা করা মোটরসাইকেল চালকরা নিয়মিত ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছেন। রোববার দুপুরে এফডিসির পাশের রেলগেটে সিগন্যাল পড়ে। এ সময় বেশ কিছু যানবাহন ট্রেন যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ততক্ষণে এগিয়ে থাকার জন্য এফডিসির সামনের ইউটার্ন দিয়ে কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী উল্টোপথে গিয়ে রেললাইন বরাবর গিয়ে ওঠেন। এর মধ্যে দুই/তিনজন অপেক্ষা না করে রেললাইনের সিগন্যালে স্থাপিত ‘বার’টির সামান্য ফাঁকা জায়গা পেয়েই বেরিয়ে যান। এ ছাড়া পান্থপথ ও ধানমন্ডি এলাকায় ঘুরে দেখা যায় যেসব সড়কে ইউটার্ন পাচ্ছে না সেখানে উল্টোপথেই মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন আরোহীরা। একইদিন সকাল ১১টার দিকে নিউমার্কেটের সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক পথচারী ফুটপাথ ছাড়া চলাফেরা করছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ফুটপাথে চলাচল করলে দ্রুত যাওয়া যায় না। তাই সড়কের ওপরই চলাফেরা করছেন।

নিউমার্কেটে দুটি ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও অনেক পথচারী নিয়ম ভেঙে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। একই দৃশ্য দেখা যায় বাড্ডা রামপুরার সড়কটিতেও। বাঁশতলা (বারিধারা), উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, রামপুরা টেলিভিশন ভবন গেটসহ একাধিক স্থানে ফুটওভারব্রিজ থাকলেও তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন সড়কের উপর দিয়ে। উত্তর বাড্ডায় এরফান নামের একজন বলেন, হাতে সময় খুব কম। তাই ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করেই রাস্তা পারাপার হচ্ছি। এতে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছেন এমনটা স্বীকার করে এরফান বলেন, আইন ভঙ্গ হচ্ছে। কিন্তু আমারও তো সময় নেই। কি করা! এখন ওভারব্রিজে উঠতে গেলে আমার আরো পাঁচটি মিনিট নষ্ট হবে। রামপুরা ব্রিজের গোড়ায় ও বাড্ডা লিংক রোডে জেব্রাক্রস চিহ্নিত স্থান থাকলেও সেখান দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন না কেউ। এদিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, আবদুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী তুরাগ, সুপ্রভাত, ভিক্টোরিয়া পরিবহনের বাসগুলো চলন্ত অবস্থায় একটু পর পর যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। বাংলামোটর ট্রাফিক সিগন্যালের ২০ গজ দূরে দ্রুতগতির বিহঙ্গ পরিবহনের গাড়িতে যাত্রী তোলা হয়। এ ছাড়া সড়কগুলোয় বেড়ে গেছে রিকশার চলাচল। যত্রতত্র বাসে যাত্রী ওঠানামা ও রিকশার কারণে সড়কে সারাক্ষণ যানজট লেগে ছিল।

একইভাবে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও আইডিবি পর্যন্ত এলাকায়ও যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। এছাড়া গাবতলী-সায়েদাবাদ রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর, সদরঘাটের ৭ নম্বর, মোহাম্মদপুর-চিটাগাং রুটের ৩৬ নম্বর, তুরাগ, ভিক্টোরিয়া, কমলাপুর-বনানী রুটের ৬ নম্বরসহ রাজধানীতে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসেই দিকনির্দেশক (ইন্ডিকেটর লাইট) নেই। এমনকি বিআরটিসির বাসেও ইন্ডিকেটর নেই। যেসব বাসে ইন্ডিকেটর আছে লেন পরিবর্তনের সময় চালকরা তাও ব্যবহার করছেন না। এতে স্বাভাবিকভাবেই পেছনের দিকে যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রাজধানীর একাধিক সড়ক ঘুরে দেখা যায় অবাধে রিকশা চলাচল। ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থায় ওইসব সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক রিকশা পার হয়ে যাচ্ছে। এতে যানচলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। তবে পুলিশের নজর পড়লে আবার রিকশাচালকদের ফেরাতেও দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে। ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের অভিযানে গত কয়েকদিনে শহরের চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে এতকিছুর মধ্যেও সাধারণ যাত্রীদের সচেতন করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশের পাশাপাশি স্কাউটের একঝাঁক কর্মী কাজ করলেও সাধারণ পথচারিরা আইন মানার চেয়ে ভাঙছেন বেশি।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=134785