১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:১২

বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে নতুন নতুন মামলা

চলছে গ্রেফতার অভিযান

নতুন নতুন মামলা হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। জেলা-উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের যেসব নেতাকর্মী রয়েছেন তাদের তালিকা ধরে এসব মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি চলছে গ্রেফতার অভিযান। প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে যাচ্ছে পুলিশ। কাউকে পেলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে।

২০ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ৮০ হাজারের ওপরে মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় আসামি সংখ্যা ২০ লাখের ওপরে। এখন নতুন নতুন মামলা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। চলতি মাসের শুরু থেকে এই মামলাগুলো দায়ের শুরু হয়েছে। আর পুরনো যে মামলাগুলো রয়েছে সেসব মামলায়ও অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে নতুন করে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, নতুন করে বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর কমিটির তালিকা ধরে ধরে নতুন মামলাগুলোতে আসামি করা হচ্ছে। আর আসামিদের তালিকা ধরে চালানো হচ্ছে গ্রেফতার অভিযান। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ২টায় থানা পুলিশ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় পুলিশ উপজেলা সদরের মাদরাসা দীঘিরপাড়ের বাড়ি থেকে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে উপজেলা সদরের উত্তরপাড়ার বাড়ি থেকে বিএনপি কার্যালয়ের পিয়ন আলমকেও আটক করে। তারপর পিয়ন আলমকে দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের তালা খুলে প্রায় ২০টি চেয়ার থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওই রাতে পুলিশ উপজেলা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল নেতাদের বাড়িতেও অভিযান চালায়। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবুল হক জানান, হঠাৎ করেই পুলিশ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, ছাত্রদল নেতা আলমগীর সব মামলায় জামিনে রয়েছে। পিয়ন আলমের নামে কোনো মামলা নেই। অথচ তাদের গ্রেফতার করে সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে পুলিশ। গ্রেফতার ভয়ে এখন কেউ এলাকায় যাচ্ছেন না।
মুরাদনগর থানার ওসি মনজুর আলম জানান, ছাত্রদলের আলমগীর ও পিয়ন আলমকে ছাড়াও জামায়াত নেতা ইলিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাতে তারা একসাথে বসে বৈঠক করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই তাদের আটক করা হয়েছে। সামনে নির্বাচন, তারা এ নিয়েই কোনো গভীর পরিকল্পনা করছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। আর বিএনপি অফিসের বেশ কিছু চেয়ার থানায় নেয়া হয়েছে অন্য কারণে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ওই দিনই পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। রাজধানীর মুগদা থানার এক বিএনপি নেতা বলেছেন, নতুন করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলার সূত্র ধরে পুলিশ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। রমনা থানার এক বিএনপি নেতা বলেছেন, পুলিশ তালিকা ধরে ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে অভিযান শুরু করেছে, যে কারণে অনেকেই এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। ঝালকাঠী জেলার এক বিএনপি নেতা বলেছেন, নেতাকর্মীরা এখন প্রায় সবাই ঘরবাড়ি ছাড়া। গত কয়েক দিনে অন্তত ১০ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঝালকাঠীর রাজাপুর থানা বিএনপির নেতা আলমগীর হায়দার, চুন্নু মেম্বর, বাবুল এবং যুবদল সেক্রেটারি অভিকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারের নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে পুরনো মামলার অজ্ঞাত আসামিরা। বিভিন্ন থানায় যেসব পুরনো মামলা রয়েছে ওই সব মামলায় অজ্ঞাত আসামির তালিকায় এখন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যাও ততই বাড়ছে। গ্রেফতার অভিযানও জোরদার হচ্ছে। এ দিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে; গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এবং যারা নাশকতা করতে পারে বলে সন্দেহ করা হয় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/347732