৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৮

রাজধানীর রাজপথ

মডেল ব্যবস্থার শুরুতেই ভোগান্তি

পুলিশের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বুধবার থেকেই গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির ভিত্তিতে 'মডেল ট্রাফিক ব্যবস্থা' চালু ছিল। তবে শুরুর দিনে ওই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিগন্যাল বাতির কারণে কোথাও পুরো সড়ক ফাঁকা। আবার কোথায়ও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এতে জিরো পয়েন্ট থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সড়ক ও আশপাশ এলাকায় দিনভর ছিল তীব্র যানজট। মডেল ব্যবস্থার মধ্যেও রাজধানীতে অসহনীয় যানজটের ভোগান্তির সেই পুরনো বৃত্তে বন্দি ছিলেন নগরবাসী। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা হাতের ইশারাতেও সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্ধারিত সড়কগুলো ঘুরে ট্রাফিকের মাসব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রমের প্রথম দিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ট্রাফিক সচেতনতার প্রথম দিনের কার্যক্রমে তারা সন্তুষ্ট। দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ নির্দেশনা মেনেই গাড়ি চালিয়েছেন চালকরা। ট্রাফিক আইনের ব্যত্যয় ঘটালে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি।

অটো সিগন্যালের বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, সিগন্যাল মান্য করে গাড়ি চালানোতে চালকরা অভ্যস্ত নন। এজন্য কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। আগামীতে তা পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত আগে থেকে নির্ধারণ করা সময় ধরে সড়কে সিগন্যাল বাতিগুলো জ্বলে ওঠে। সেটা মানতে গিয়ে কোনো কোনো রাস্তায় গাড়ির চাপ, আবার অন্য রাস্তায় ফাঁকা দেখা গেছে। তবে শিগগিরই ট্রাফিক সার্জেন্টদের হাতে অটো সিগন্যালের রিমোট কন্ট্রোল দেওয়া হবে। তখন পরিস্থিতি বুঝে বাতি জ্বালানো-নেভানো যাবে।

এদিকে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে মাসব্যাপী ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু হলেও গাড়ির বেশিরভাগ চালকই এখনও নতুন অনেক নির্দেশনার বিষয়ে জানেন না। বাসে চালকদের ছবি ও মোবাইল নম্বর ঝোলাতে পুলিশের নির্দেশনা থাকলেও তা কোনো বাসে দেখা যায়নি। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামাতে কড়াকড়ি থাকলেও সে খবরও পৌঁছেনি চালকদের কাছে। এতে ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল সড়কে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে।

দিনের শুরুতে পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী ট্রাফিক আইন ভেঙে বাস চালাতে গিয়ে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে চালকদের। এমন পরিস্থিতিতে দুপুরের মধ্যে ঢাকার সড়কে বাসের সংখ্যাও কমে গেছে। গণপরিবহন সংকটে বিপাকে পড়তে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।

মিরপুর-সদরঘাট রুটে চলাচলরত বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসের চালক ইমরান হোসেনের সঙ্গে কথা হয় শাহবাগ এলাকায়। তিনি বাসে নিজের ছবি বা মোবাইল নম্বর ঝুলিয়ে রাখেননি। কারণ জানতে চাইলে ইমরান বলছিলেন, এমন নিয়মের বিষয়ে তিনি জানেন না।

দুপুর ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ার পাশেই ফার্মগেটগামী একটি বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছিল। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ নির্ধারিত স্টপেজ নেই। ব্যস্ত সড়কে কেন বাস থামানো হয়েছে জানতে চাইলে বাসটির হেলপার সুমন বলছিলেন, এখানে সব সময় বাস থামে। কিন্তু বাস থামানোর নির্দিষ্ট জায়গার কথা বললেও তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।

অবশ্য বিভিন্ন বাস স্টপেজে দেখা গেছে, পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসের গেটগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েকদিনের তুলনায় অনেকটা নিয়ম মেনেই বাস চালিয়েছেন চালকরা। পুলিশের তৎপরতার কারণে নির্ধারিত সড়কগুলোতে যত্রযত্র তারা বাসও থামাতে পারেননি। তবে এর বাইরে সদরঘাটে প্রবেশ মুখের সড়ক কলেজিয়েট স্কুলের সামনে সড়ক দখল করে লেগুনা রাখায় ওই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। বংশাল থানার সামনের সড়ক দখল করে পিকআপ ভ্যানের টার্মিনাল গড়ে তোলাও ওই এলাকাতেই ছিল যানজটের পুরনো চেহারা। গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার এলাকার যানজট চিত্রও ছিল অভিন্ন। তবে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম ও নগর ভবনের সামনের সড়ক দখল করে থাকা লেগুনা সরিয়ে নেওয়ায় এসব এলাকার রাস্তা ছিল ফাঁকা। মতিঝিল থেকে যাত্রাবাড়ী এবং ঢাকার উত্তরে ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১০ নম্বর এবং গাবতলী থেকে মিরপুর সড়কেও যানজট দেখা গেছে।

এদিকে পুলিশের ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার প্রায় সব পেট্রোল পাম্পেই 'হেলমেট ছাড়া জ্বালানি বিক্রি হবে না' লেখা সাইনবোর্ড দেখা গেছে। তবে এর মধ্যেই হেলমেট ছাড়া অনেক মোটরসাইকেল চালককেও জ্বালানি নিতে দেখা গেছে।

পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে মেঘনা পেট্রোল পাম্পের কর্মী মো. বাবু বলছিলেন, সার্জেন্টরা এসে তাদের বলে গেছেন হেলমেট না থাকলে তেল বিক্রি করা যাবে না। প্রায় সব মোটরসাইকেল চালকের মাথাতেই তারা হেলমেট পেয়েছেন। এক-দুইজন হেলমেট ছাড়া পেলেও তাদের জ্বালানি দিয়ে বলা হয়েছে ভবিষ্যতে আর দেওয়া হবে না।

ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকার ৪০টি পয়েন্টে ট্রাফিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ১৫টি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে রোভার স্কাউটস ও গার্লস গাইডের সদস্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন সড়কের ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ির পাশে রোভার সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তাদের তৎপরতার কারণে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশি ছিল।

লেগুনা বন্ধে যাত্রী ভোগান্তি :বুধবার দুপুর পৌনে ১২টা। রাজধানীর গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার-সংলগ্ন স্ট্যান্ড থেকে নিউমার্কেটগামী লেগুনায় ওঠার অপেক্ষায় যাত্রীর দীর্ঘ লাইন। গতকাল থেকে লেগুনা বা হিউম্যান হলার বন্ধের ঘোষণা থাকলেও সব রুটে এ নির্দেশ শতভাগ কার্যকর হয়নি। কোথাও লেগুনা চলেছে, কোথাও চলেনি। আবার একই রুটে সকালে চললেও দুপুরের পর চলেনি। তবে হঠাৎ করে লেগুনা বন্ধের ঘোষণায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। কোনো প্রকার বিকল্প না দিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা ছিল যাত্রী, লেগুনা চালক, হেলপার ও মালিকদের পক্ষ থেকে। লেগুনা হঠাৎ বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অটোরিকশা-অটোটেম্পো পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

সকাল ৮টার দিকে মিরপুর ৬০ ফিট রাস্তা থেকে লেগুনায় চড়ে ফার্মগেট এসেছেন মো. সুলতান। তবে এ প্রতিবেদক দুপুর আড়াইটার দিকে ফার্মগেট গিয়ে কোনো প্রকার লেগুনা চলতে দেখেননি। এ প্রসঙ্গে সুলতান বলেন, সকালের দিকে চললেও এখন আর চলছে না। ধানমণ্ডির শংকর, জিগাতলা, মিরপুর প্রভৃতি স্পট থেকেও ফার্মগেটগামী লেগুনা চলাচল করে। তবে গতকাল এসব জায়গা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এসব গাড়ি চলাচল করেনি। তেজগাঁও রেললাইন সংলগ্ন স্ট্যান্ড থেকে সাতরাস্তা হয়ে চলাচলকারী লেগুনা গতকালও সচল ছিল। সেখানে কর্তব্যরত ডিএমপির সহকারী উপ-পরিদর্শক (ট্রাফিক) মহসিন জানান, শুধু প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। তাই ভেতরের সড়কগুলোতে তারা বাধা দিচ্ছেন না

http://www.samakal.com/capital/article/1809313