৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৩

বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা ঠিক হবে না। ইভিএম কেনার জন্য নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় দেখে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আর মাত্র দেড়মাস বাকি। এখন ইভিএম কিনে ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় কোথায়? গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সুজন সম্পাদক বলেন, যেকোনো প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল সৃষ্টি করতে বছরের পর বছর সময় লাগে। সেখানে নির্বাচনের মাত্র চার মাস রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কীভাবে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনার উদ্যোগ সন্দেহজনক।
তিনি বলেন, খুলনা মডেলেই ৩০শে জুলাই অন্য তিন সিটি করপোরেশনে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালের নির্বাচনগুলো আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। প্রত্যাশা পূরণ হয়নি সচেতন নাগরিকদেরও। ফলে আস্থাহীনতা বেড়েছে নির্বাচন কমিশনের ওপর।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাক্রমে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হওয়া দরকার। জাতীয় সনদে কি কি বিষয় থাকতে পারে সেসব উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, নির্বাচনের পূর্বে, নির্বাচনকালে এবং নির্বাচনের পর কখন কী ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতি হয় তা নিশ্চিত করতে হবে, কার কী ভূমিকা হবে, সরকার গঠন করলে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে, বিরোধী দলে থাকলে সংসদকে কার্যকর রাখার জন্য কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, সনদের শর্ত ভঙ্গ করলে কী হবে তা উল্লেখ থাকবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না তা বলা যায় না। তার বক্তব্যেই বোঝা যায় অনিয়ম হবে এমন একটি স্ট্যান্ডার্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ নীতি অব্যাহত থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনও নিয়ন্ত্রিত হবে।

সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ইভিএম বুথে ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে সুইচ থাকবে। তিনি সুইচ টিপ দেয়ার পর ভোট দিতে পারবেন। এসময় যদি সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার একাধিকবার সুইচ টিপ দেন তাহলে একজন ভোটারই একাধিক ভোট দিতে পারবেন। সুতরাং নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা না থাকলে ইভিএম মেশিন দিয়েও ভোট কারচুপি করা সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘খুলনা মডেল’রই পুনরাবৃত্তি বহুলাংশে ঘটেছে। খুলনা মডেলের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করা; বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা; নির্বাচনের দিনে জোর-জবরদস্তি করা ও নির্বাচন কমিশনের নির্বিকার থাকা।

একইসঙ্গে উন্নয়নের নামে ভোটারদের ‘জিম্মি’ করাও ছিল একটি নির্বাচন কৌশল। তবে, পুলিশকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠছাড়া করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। ফলে তফসিল ঘোষণার পর পরই আদালতের রায়ের সূত্র ধরে নির্বাচন কমিশন তিনটি সিটিতেই নির্বাচনের পূর্বে মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনা দেয়া হয়, যা কাজ করেনি। কেননা, নির্দেশনা প্রদানের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা হতে দেখা যায় সিটিগুলোতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরাতন মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে দেখা গেছে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=134113