৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:১২

ইভিএমে সায় নেই আ.লীগ শরিকদের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম-এর ব্যবহারে সায় নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের। কারণ হিসেবে দলগুলোর নেতারা বলছেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণ করতে গেলে জটিলতার সৃষ্টি হবে; যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। এছাড়া জনগণ ইভিএমকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাদের ধারণা ইভিএম’র মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করবে।

নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখন পর্যন্ত বিতর্ক চলছে। এর মধ্যে ইভিএম নিয়ে নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টি না করাই ভাল। এছাড়া দেশের মানুষ ইভিএম ব্যবহার করে ভোট দেবার মত অবস্থায় নেই এবং নির্বাচন কমিশনের এটা ব্যবহারের মত উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল নেই। ইভিএম’র সার্ভার হ্যাং করলে বা সমস্যা দেখা দিলে তা সারবার মত জনবলও নেই। নেতারা বলেন, তবে বিশ্ব নতুন নতুন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ভোট দেবার পদ্ধতিতে আগামীতে আরো প্রযুক্তি যুক্ত হবে। তাই নতুন প্রযুক্তি হিসেবে সল্প পরিসরে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে নির্বাচন কমিশনের যেমন প্রশিক্ষণ হবে তেমনি দেশের জনগণেরও কিছুটা অভ্যাস হবে। তবে এই নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে জোড়াজড়ি না করাই শ্রেয় হবে।

শরীফ নুরুল আম্বিয়া ইনকিলাবকে বলেন, ‘জনগণ যদি ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকে তাহলে আমাদের আপত্তি নাই। তবে দেশের জনগণ শিক্ষিত নয়, তারা এভাবে ভোট দেয়াতেও অভ্যন্ত নয়। আর যেহেতু ইভিএম নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তাই ব্যবহার না করাই ভাল হবে।’
দিলিপ বড়–য়া ইনকিলাবকে বলেন, ‘ইভিএম বর্তমান সময়ের জন্য উপযুক্ত নয়।’ জাতীয়সমাজ তান্ত্রিক দল-জাসদের কার্যকরি সভাপতি রবিউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, দেশে প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইভিএমসহ আরো নতুন উন্নত প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আসবে। দেশের সব মানুষ শিক্ষিত নয় তাই ইভিএম বড় পরিসরে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু প্রযুক্তি হিসেবে সল্প পরিসরে ব্যবহার করে এর কার্যকারিতা দেখা যেতে পারে।

তিনি বলেন, বিশ্বাসহীনতার কারণে সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তে বিরোধীতা করে বিরোধীদল। এটা আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যখন এরশাদ সরকার ভ্যাট আইন করে তখন বিএনপি আওয়ামী লীগ উভয় দল একত্রে বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু এখন ভ্যাট ৩য় রাষ্ট্রীয় আয়ের উৎস। তরিকত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চাদঁপুরি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ইভিএম’র বিপক্ষে কারণ এর জনগণ এখনো প্রস্তুত নয়। জনগণ সন্দেহের চোখে দেখে; তারা মনে করে এর মাধ্যমে সরকার ভোট চুরি করবে। এছাড়া ইভিএম নতুন করে ক্রয় করে এর ব্যবহার প্রচার করা, নির্বাচন কমিশনের লোকবল প্রশিক্ষণ দেয়া জটিলতার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি এটা সরকারের জন্য নেগেটিভ। তাই আমরা ইভিএম এর বিপক্ষে।
গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে সিকদার ইনকিলাবকে বলেন, জনগণ ইভিএম নিয়ে সন্দিহান ভোট চুরি হবে কি না? তাই এ নিয়ে বিরোধী দলগুলোকে কথা বলার ইস্যু না দেয়াই ভাল।
এদিকে চৌদ্দ দলের এক বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেছেন, ‘আমরা মনে করি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পরীক্ষামূলক ব্যবহার হতে পারে বৃহৎ পরিসরে নয়’। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা কামরুল আহসান বলেন, ‘কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে’।

ওয়ার্কার্স পার্টি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ‘ঘোড়ার আগেই গাড়ি’ জুড়ে দেয়ার সঙ্গে তুলনা করে বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করে অংশিজন তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেয়।
এছাড়া সরকারের এক শরিক ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও মনে করে, জনগণের ওপর ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ইভিএমের ব্যাপারে জনমনে অনেক সন্দেহ রয়েছে। তাই এই ভোটিং পদ্ধতি চালুর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তা না করে ইভিএম জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এরশাদ বলেন, আমাদের মানুষ তো টিপসই দিতে পারে না, ইভিএমে টিপ দেবে কীভাবে? এতগুলো আসনে যদি একসঙ্গে ইভিএম হয়, তবে তার সফলতা নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই।
এদিকে ৩ সেপ্টেম্বর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে ইভিএম চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা বা না করার বিষয়টি ইসির এখতিয়ার। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল পাওয়া গেছে।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর দুই মাস আগে নির্বাচন কমিশন যখন সব প্রস্তুতি গুছিয়ে আনছে, তখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে আইন সংস্কারের উদ্যোগে ভিন্নমত পোষণ করেছেন খোদ একজন নির্বাচন কমিশনার।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে কমিশন সভা শুরুর আধা ঘণ্টার মাথায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভা বর্জন করে বেরিয়ে আসেন এবং পরে কর্মচারীর মাধ্যমে নোট অব ডিসেন্ট পাঠিয়ে দেন। তিনি লিখেছেন, আমি মনে করি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ সমর্থন করি না। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করে নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি। স্থানীয় নির্বাচনে ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার করা যেতে পারে।
সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার সংশোধিত আরপিও ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দুজন যুগ্মসচিব আরপিওর সংশোধিত কপি আইন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যান।
ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, আরপিওতে ১৪ ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ইভিএমের বিষয়টি মূল। এ ছাড়া অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত ঋণ পুনঃ তফসিল করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। ##

https://www.dailyinqilab.com/article/151407