প্রতীকী ছবি
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:০৫

১০ খাতে প্রস্তাবিত ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

পিইসি সভায় উপস্থাপন আজ * আড়াই বছরে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০৪ কোটি টাকা

চীনের দেয়া ঋণে বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতির কারণে ব্যয় বাড়ছে এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, যথাসময়ে এ প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। মেয়াদ বাড়ছে আড়াই বছর।
এজন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১০ খাতে প্রস্তাবিত ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ বুধবার ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ নামের এ প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সুবীর কিশোর চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করবেন।
অন্যদিকে প্রকল্পটির শুরু থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত আড়াই বছরে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫০৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ যুগান্তরের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, আগে মিটিং হয়ে যাক তারপর আসেন। তখন কথা বলা যাবে।
পিইসি সভার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান মো. এনায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত প্রস্তাবিত বিভিন্ন খাতের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যয় সম্পর্কে পিইসি সভায় জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তাদের যুক্তি ও বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা যদি যুক্তির মাধ্যমে দেখাতে পারেন এ ব্যয়ের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে আমরাও মেনে নেব। তা না হলে বিভিন্ন সুপারিশ দিয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হবে।
সেসব সুপারিশ প্রতিপালন করে পুনরায় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পাঠালে তারপর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ দেয়া হয়ে থাকে। এটা যে কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না। মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে এখন মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ হাজার ৩৯১ কোটি ১০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ। তা ছাড়া মেয়াদ আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে. অতিরিক্ত ৬৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা, ভ্যাট ও ট্যাক্স খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা বিধানে নৌ-বাহিনীর সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি টিম অন্তর্ভুক্তি, নতুন আইটেম হিসেবে ইউটিলিটি শিফটিং, স্পিড বোট ক্রয়, ইন্টারেস্ট ডিউরিং কনস্ট্রাকশন আইটেমটি বাদ দেয়া ও ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার কারণে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পিইসি সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তা খাতে এক হাজার ৫১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে দেয়ার সুপারিশ করা হবে। এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিময় হারের ভিত্তিতে প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করতে বলা হবে।
এ ছাড়া টানেল নির্মাণের পরিমাণ কমলেও এ খাতে অতিরিক্ত ৭৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ও টোল প্লাজার আকার একই থাকলেও অতিরিক্ত ১৩৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি অর্থায়নে অতিরিক্ত দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকার যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে। টিইসি ও এক্সপার্টদের সম্মানী বাবদ চার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখান থেকে সাত কোটি ছয় লাখ ৭২ হাজার বাড়িয়ে মোট ১১ কোটি ছয় লাখ ৭২ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু অতিরিক্ত এ বরাদ্দ বাদ দেয়া যেতে পারে বলে মনে করছে কমিশন। দুটি জিপ গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাদ দেয়া হবে, অন্যান্য খাতে প্রস্তাবিত দুই কোটি টাকার পরিবর্তে এক কোটি টাকা রাখতে বলা হবে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার জন্য সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি খাতে ৬৫ কোটি টাকা প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে। নতুন আইটেম হিসেবে কেবিন ক্রুজার কেনার জন্য দুই কোটি ২০ লাখ টাকা প্রস্তাব বাদ দেয়া হবে।

সার্ভিস এরিয়া খাতে ১১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ও ভ্যাট বা ট্যাক্স খাতে অতিরিক্ত ৭০৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে। ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি খাতে প্রস্তাবিত ১৯২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রস্তাবের বিপরীতে এর অর্ধেক রাখার সুপারিশ করা হতে পারে। এ ছাড়া ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি খাতে ৫৭৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা অর্থাৎ ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে এনে ২ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হবে পিইসি সভায়।
সূত্র জানায়, নকশা অনুযায়ী- টানেলের শহরপ্রান্ত থাকবে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পয়েন্টে। অপরপ্রান্ত থাকবে নদীর পশ্চিম তীরে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) এলাকায়।
পূর্বপ্রান্তে পাঁচ কিলোমিটার ও পশ্চিমে এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অর্থায়ন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। প্রথম কিস্তি ছাড় দিয়েছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা প্রতিশ্রুত ঋণ পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। গত ৭ ডিসেম্বর এক হাজার ১০৮ কোটি টাকা ছাড় করেছে চায়না এক্সিম ব্যাংক।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি চার হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ঋণ দেবে। এ ছাড়া একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনও করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/87007