রাজধানীতে মোটরসাইকেল চালকের নামে মামলা লিখছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট : মহাখালীতে বেপরোয়া গতিতে চলার সময় বাস ও প্রাইভেট কারের ধাক্কা : নয়া দিগন্ত
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:১৪

নিষ্ক্রিয় বিআরটিএ : পুলিশের টার্গেট মোটরসাইকেল

নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগ। সড়কে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে এই বিভাগটির ব্যাপক দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও আদতে তাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। এ দিকে, ট্রাফিক পুলিশের টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুই মোটরসাইকেল। বেপরোয়া গতির যেসব গাড়ি একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলছে সেসব গাড়ির দিকে নজর নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওইসব গাড়ির বেশির ভাগ কোম্পানির মাসিক লেনদেনের সমঝোতা রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সাথে। রোড সেইফটি বিভাগের পরিচালক বলেছেন, নিরাপত্তা প্রদানের মূল দায়িত্ব পুলিশের।

দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। নিহত হচ্ছে যাত্রী এবং সাধারণ পথচারী। এমনকি, কোনো কোনো সময় বেপরোয়া গাড়ি রাস্তার পাশে ফুটপাথ, দোকান-পাট বা বাসাবাড়িতে ঢুকে মানুষ মেরে ফেলছে। সম্প্রতি এক তথ্যে দেখা গেছে গড়ে প্রতিদিন ১৫ জনের উপরে নিহত হচ্ছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। পুলিশের চোখের সামনে মানুষ পিষে মারছে বেপরোয়া গাড়ি। বাদ যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। গত রোববার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর বেড়িবাঁধ এলাকায় জব্দ করা ঈগল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর উত্তম কুমার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি নিয়ে এসআই উত্তম থানায় যাচ্ছিলেন। তিনি মোটরসাইকেলে গাড়িটির সামনে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ গাড়িটির গতি বেড়ে গেলে উত্তম কুমার গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় রোববার রাতে জানে আলম গাজী ও রিপন শিকদার নামের দুই মোটরসাইকেল আরোহী বেপরোয়া কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত হন। কাভার্ডভ্যানটি ওই দুইজনকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন দু’জন। নিহতদের একজন ‘পাঠাও’ বাইকের চালক, অপরজন যাত্রী। রংপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে গত রোববার নিহত হন সাতজন। আহত হয়েছেন ৪২ জন। এভাবেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন কোনো দিন নেই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাস্তায় নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বিআরটিএর একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে। যার নাম রোড সেইফটি বিভাগ। যাত্রী ও পথচারীদের প্রাণ যাতে বেপরোয়া গাড়ির চাকায় পিষ্ট না হয়, তা দেখভালের জন্যই এই বিভাগটি। কিন্তু বিআরটিএর গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি এখন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় বলে একাধিক সূত্র বলেছে। এখানে যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন অফিসে বসে বসে তাদের সময় কাটে। এমন কথাও বলেছেন খোদ বিআরটিএরই একাধিক কর্মকর্তা- কর্মচারী। রাস্তায় এত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও এই বিভাগটির কোনো রা নেই। এই বিভাগের পরিচালকের সাথে গতকাল সোমবার রাতে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলতেও নারাজ। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগটি কি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে? একের পর এক মৃত্যুর ঘটনারোধে তাদের কি কোনো দায়িত্ব আছে? তিনি প্রথমে বলেন, তাদের লোকবল সঙ্কট রয়েছে। মাত্র তিনজন লোক রয়েছে এই বিভাগে। আবার সাথে সাথেই তিনি বলেন, ১০০ লোক দিলেও নিরাপত্তা দেয়া তাদের সম্ভব নয়। কারণ নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব হলো পুলিশের। গাড়ির মালিক, চালক ও পুলিশ এই দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে তা অবৈধ গাড়ি চলার কারণে ঘটেছে। পুলিশের দায়িত্ব ছিল অবৈধ গাড়ি আটক করা।

এ দিকে, পুলিশকে দেখা যাচ্ছে বেপরোয়া গাড়ির দিকে তাদের কোনো নজর নেই। গতকাল বেশ কয়েকটি স্পটে দেখা যায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি করছে। কিন্তু কোথাও একটি বাস বা প্রাইভেট গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশির দৃশ্য চোখে পড়ল না। তাদের টার্গেটই যেন মোটরসাইকেলের দিকে। প্রতিটি স্পটেই দেখা গেছে পুলিশ মোটরসাইকেল দেখলেই হাতের ইশারায় থামাচ্ছে। প্রতিটি মোটরসাইকেলের কাগজপত্র তল্লাশি করতে সময় নিচ্ছে ৫-১০ মিনিট। আর ট্রাফিক পুলিশ যখন মোটরসাইকেলের কাগজ দেখছেন তখন পাশ দিয়ে সাই সাই করে ছুটে যাচ্ছে বেপরোয়া গতির বাস বা অন্য কোনো গাড়ি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/346085