৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ২:০৭

রফতানি ঘুরপাক খাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়

নির্ভরশীলতা বাড়ছে তৈরী পোশাকের ওপর

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য। বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হলেও এর ৭৫ শতাংশ দখল করে রেখেছে এ দু’টি অঞ্চল। ইউরোপ-আমেরিকার সাথে কানাডা এবং জাপানকে যুক্ত করলে এ হার দাঁড়ায় ৮১ শতাংশে। অন্য দেশগুলোয় রফতানি সীমাবদ্ধ হয়ে আছে ১৯ শতাংশে। বিশেষ করে মিত্রদেশ হিসেবে পরিচিত ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশে রফতানিচিত্র খুবই হতাশাজনক।

রফতানির তালিকায় শতাধিক পণ্য থাকলেও তৈরিপোশাক বাদে অন্য কোনোটিরই লক্ষণ সন্তোষজনক নয়। তৈরিপোশাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মোট রফতানির ৮৬ শতাংশ। মূলত রাজনৈতিকভাবে মিত্রদেশ হিসেবে পরিচিতদের কাছ থেকে কোনো সুযোগ আদায় করতে না পারা এবং অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি বাড়াতে ব্যর্থতার কারণেই থমকে আছে রফতানিচিত্র।
সদ্যবিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রফতানি বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইইউতে ২১ হাজার ৩৩৪.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৫৮.১৮%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৯৮৩.৩১ মিলিয়ন ডলার (১৬.৩২%), কানাডায় এক হাজার ১১৮.৭২ মিলিয়ন ডলার (৩.০৫%) এবং জাপানে এক হাজার ১৩১.৯ মিলিয়ন ডলারের (৩.০৯%) পণ্য রফতানি হয়েছে বছরটিতে। এই চারটি বাজার থেকে মোট ২৯ হাজার ৫৬৮.৪৪ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে, যা ওই সময়ের মোট রফতানি আয়ের ৮০.৬৩%।
বিদায়ী অর্থবছরের পণ্য রফতানির দেশভিত্তিক চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী রফতানিপণ্যের বৃহত্তম বাজার। বরাবরের মতোই আমাদের পণ্যের আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে ৫৯৮৩.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য যা এ সময়ের মোট রফতানির ১৬.৩২%। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত প্রধান প্রধান পণ্য হলো ওভেন পোশাক (৩ হাজার ৯৭৭.৭ মিলিয়ন ডলার), নিটওয়্যার (এক হাজার ৩৭৪.৩৭ মিলিয়ন ডলার), হোম টেক্সটাইল (১৮০.৭ মিলিয়ন ডলার), ক্যাপ (এক হাজার ২৬.১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ও ক্রাসটাসিনস্ (১৯.৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বিবেচ্য সময়ে আমাদের মোট রফতানিকৃত ওভেন পোশাকের ২৫.৭৯%, নিটওয়্যার ৯.০৫% ও হোম টেক্সটাইল ১৮.০৪% যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাপানে এক হাজার ১৩১.৯ মিলিয়ন, কানাডায় এক হাজার ১১৮.৭২ মিলিয়ন, বেলজিয়ামে ৮৭৭.৯ মিলিয়ন, ভারতে ৮৭৩.২৭ মিলিয়ন, রাশিয়ায় ৪৮৫.২৩ ডলারের, অস্ট্রেলিয়ায় ৭১২.৯২ মিলিয়ন, দণি কোরিয়ায় ২৫৪.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, হংকংয়ে ৩১২.৮৯ মিলিয়ন, ইউএইতে ৩২৯.৫৫ মিলিয়ন, ব্রাজিলে ১৭৬.৯ মিলিয়ন, সৌদি আরবে ২০৫.৩২ মিলিয়ন, মেক্সিকোতে ১৬৩.৯৯ মিলিয়ন, মালয়েশিয়ায় ২৩২.৪২ মিলিয়ন, সিঙ্গাপুরে ১২৫.৭৫ মিলিয়ন এবং দণি আফ্রিকায় ৮৪.৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী রফতানি হয়েছে।

এ ছাড়াও নরওয়ে, চিলি, সুইজারল্যান্ড, ইরান, পাকিস্তান, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী রফতানি হচ্ছে। এসব দেশে রফতানিকৃত প্রধান পণ্যগুলো হলো : তৈরিপোশাক, হোম টেক্সটাইল, টেরিটাওয়েল, কটন ও কটন পণ্য, ম্যানমেড ফিলামেন্টস ও স্টেপল ফাইবার, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার, কাঁচাপাট ও পাটজাতপণ্য, কার্পেট, হিমায়িত মাছ, ক্রাসটাসিনস্, সাকসবজি ও আলু, ফলমূল, শুকনো খাবার, গুঁড়া মসলা, রাবার, তামাক, প্লাস্টিক-মেলামাইন দ্রব্যাদি, হ্যান্ডিক্রাফট, সিরামিক টেবিলওয়্যার, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাইসাইকেল, জাহাজ, কপারওয়্যার, লোহার পাত, ফার্নিচার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, গলফ শ্যাফট ও কম্পিউটার সার্ভিসেস।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/345778