২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১১:০৬

চামড়া বাণিজ্যে লুকোচুরি

কোরবানি শেষ হয়েছে ১০ দিন আগে। অথচ এখনও চামড়া কেনা শুরু করেনি ট্যানারি মালিকরা। এ নিয়ে গড়িমসির মধ্যেই তারা জানিয়েছেন সরকারের বেঁধে দেয়া দামের বাইরে চামড়া কেনা হবে না। অপরদিকে বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা কম দামে লোকসান দিয়ে কিছুতেই চামড়া হাতছাড়া করতে রাজি নয়। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় বাড়তি দামে কেনা লবণযুক্ত কোরবানির চামড়া এখন অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আমিনবাজার ও পোস্তার কিছু বেপারি এখন উত্তরবঙ্গের বগুড়া, শেরপুর, নাটোরসহ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে চামড়া নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ শুরু করেছেন। এখনই লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি না করে অপেক্ষা করতে চান তারা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এবং ট্যানারি মালিকদের গুদামে মজুদ চামড়ার টান পড়লে তারা ওই চামড়া বাড়তি দামে বিক্রি করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছেন।

তবে ভারতে লবণযুক্ত চামড়ার বর্গফুট প্রতি দাম দেশীয় বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় তা গোপনে পাচারেরও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। একই কারণে উত্তরবঙ্গসহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে লবণযুক্ত চামড়া ঢাকায় আসার সম্ভাবনাও কম। সরকারি ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া সত্ত্বেও ট্যানারি মালিকরা আগের বছরের চামড়া বকেয়া এখনও পরিশোধ করেননি। ফলে চামড়া কেনায় তারা যখন মাঠে নামবেন তখন চাহিদা অনুযায়ী কিংবা গুণগতমানের চামড়া নাও পেতে পারেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে। ইতিমধ্যে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে ১১৫ ট্যানারি উৎপাদন শুরু করেছে। যাদের সবক’টির উৎপাদন ক্ষমতা হাজারীবাগ থেকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি। এ পরিস্থিতির জন্য ট্যানারি মালিকদের দেরিতে চামড়া কেনাকেই দায়ী করেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, চামড়ার বাজারে বেপারিদের এখন নগদ টাকার প্রকট সংকট।
ট্যানারি মালিকরা যে টাকা ঋণ নিয়েছেন তার থেকে বেপারিরা সিকিভাগও পরিশোধ করছেন না। তারা বলেছেন, তাদের কাছে ৩৫ শতাংশ চামড়া মজুদ আছে। তার মানে ৬৫ শতাংশ চামড়া তারা রফতানি করেছেন। সেই অংশের টাকা থেকেও তারা বেপারিরা পাওনা পরিশোধ করছেন না। তাহলে ধার করা টাকায় চামড়া কিনে কেন বাকিতে ট্যানারি মালিকরা বিক্রি করবেন?

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু করে পরবর্তী দু’মাস পর্যন্ত লবণযুক্ত চামড়া কেনাকাটা করবে ট্যানারির মালিকরা। তবে হাঁকডাক যাই-ই করুক শেষ পর্যন্ত চামড়ার গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে মূল্য ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তেও পারে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূল্য কিছুটা হয়তো বাড়ানো হতে পারে। সেটি হলেও তা শুধু বিশেষ কিছু চামড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, রফতানির বাজার নিয়ে শঙ্কায় আছি। বেশিরভাগ কারখানারই রফতানি পণ্যের কনটেনাইর পড়ে আছে। ২৫ শতাংশ রফতানির বাজার চীনেও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তারা এখন পণ্য নিচ্ছে না। মূল্য কমাতে বলছে। পাশাপাশি রফতানির ৭৫ শতাংশের বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানিকারকরা বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যে এখন অনীহা প্রকাশ করছেন। তারা সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরী নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। ফলে যে আশায় এতদিন তারা বাংলাদেশমুখী ছিলেন, এখন ট্যানারি স্থানান্তরের পর আসল চেহারা দেখে ক্রেতারা ভিন্ন দেশে হাঁটছেন। ফলে বাংলাদেশের বাজার চলে যাচ্ছে অন্যদের কাছে।

এদিকে ট্যানারি শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক কম দাম দিয়ে চামড়া কিনেছে। এর দায়ভার এসে পড়েছে ট্যানারির মালিকদের ওপর।
বলা হচ্ছে, ট্যানারির মালিকরা অনেক কম দামে চামড়া ক্রয় করছেন; কিন্তু ট্যানারির মালিকরা এখন পর্যন্ত চামড়া কেনা শুরু করেনি। এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য তিনি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, বেঁধে দেয়া মূল্যে চামড়া বিক্রি সম্ভব নয়।
কারণ আমাদের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে বাড়তি ২০০ টাকা বেশি ব্যয় হবে প্রতিটি চামড়ার পেছনে। মূলত লবণ, গুদাম ও শ্রমিক, আড়তদারি মিলে এ খাতে ব্যয় হবে। এছাড়া একজন পাইকার কাঁচা চামড়া কিনতে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তা কমপক্ষে দেড় থেকে দু’মাস পড়ে থাকে। এরও একটি মুনাফা থাকতে হবে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/85893