২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১১:০১

চরম অস্থিরতায় দেশের শ্রমশক্তি রফতানি খাত

ইবরাহীম খলিল : চরম অস্থির সময় পার করছে দেশের শ্রমশক্তি রফতানি খাত। দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স বা বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর পথ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
৩০ আগস্ট সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচি শেষ হওয়ায় মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ কাগজহীন অভিবাসীদের ধরতে দেশব্যাপী এই অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছেন সেখানে কাগজহীন অবস্থায় থাকা প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী। অভিযানে ধরা পড়লে নিশ্চিতভাবেই তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। একারণে যারা পারছেন দেশে ফিরে আসছেন। যারা আসতে পারছেন না তারা আতংকে রয়েছেন। এমনকি, তারা ঘর থেকেও বের হচ্ছেন না।
ভূক্তভোগীরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় যেসব শ্রমিকের কাজের অনুমতি রয়েছে তারাও আতঙ্কিত। কেননা, কাগজ রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরকেও গ্রেফতার করার অনেক ঘটনা রয়েছে। পুরো মালয়েশিয়া জুড়েই এমনটি হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে যারা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য তাদের পাঠানো যাবে বলে নিশ্চয়তা কথা বলা হচ্ছে। এরপরও উদ্বেগ কমছে না।

প্রসঙ্গত, এক বছর আগে শুরু হওয়া সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচিতে বলা হয়েছিলো মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ অভিবাসীরা ৩০০ রিঙ্গিত বা ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে এবং আরও ১০০ রিঙ্গিত ফি দিয়ে নিজ দেশে ফেরার বিশেষ অনুমতি লাভ করতে পারবেন। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মোস্তাফার আলি বিভাগের ফেসবুক পেজে গত ৩০ আগস্ট বলেন, সাধারণ ক্ষমার দিন বাড়ানো হবে না। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ৩১ আগস্ট থেকে আমরা সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছি। আমরা তাদেরকে এই কর্মসূচির সুবিধা নেয়ার জন্যে যথেষ্ট সময় দিয়েছি।
গত জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত ৯,২০০ অভিযানে অন্তত ২৮ হাজার ৬৩ জন অবৈধ অভিবাসী এবং ৭৯৯ চাকরিদাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি বাংলাদেশী হতে পারেন।

এদিকে আরব আমিরাতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করার পর ১০ দিনের মধ্যেই তাদের দেশটি ছাড়তে হবে। আমিরাতের ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি এন্ড সিটিজেনশিপ ৩০ আগস্ট এই ঘোষণা দিয়েছে। এই দেশ থেকেও ফিরতে হতে পারে বিপুল সংখ্যক মানুষকে।
মালয়েশিয়ায় কতজন অবৈধ অভিবাসী আছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা না গেলেও আনুমানিক পাঁচ লক্ষাধিক বলে বিশ্বাস করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তাফার আলী জানান, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈধতার জন্য রেজিস্ট্রেশন (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) করেছেন সর্বমোট ৭ লক্ষ ৪৪ হাজার বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা। সঠিক প্রক্রিয়া ও কাগজপত্র জমা দিয়েছেন ৪ লক্ষ ৫০ হাজার শ্রমিক। বাকি দুই লক্ষ ৯৪ হাজার ও রিহায়ারিং এর আওতার বাইরে আরো দুই লক্ষাধিক অভিবাসীর সন্ধানে তিন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মালয়েশিয়াজুড়ে চলবে সাঁড়াশি অভিযান। গত ২৪ আগস্ট অভিবাসন বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে বেঠক করেছেন পুলিশ প্রধান ও অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোস্তফার আলী। এরপর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, এখন থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশও অবৈধ শ্রমিকদের ব্যাপারে তল্লাশি করবে এবং সারা মালয়েশিয়াজুড়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযানে।
এদিকে বেকার হয়ে মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকেও ফিরছেন হাজার হাজার লোক। নারী শ্রমিকরা ফিরছেন নির্যাতনের শিকার হয়ে। অন্যদিকে বিদেশ যাওয়ার জন্য যারা প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন তাদের মধ্যেও বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। প্রতিদিন বিদেশ থেকে আসছে নেতিবাচক খবর। বিদেশ গিয়ে আদৌ তাদের সুফল আসবে কি না তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।

http://www.dailysangram.com/post/343859