৩১ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৪২

‘বিতর্কিত’ ইভিএমের পক্ষে হুদা কমিশনের রায়

খোদ কমিশনেই আপত্তি থাকার পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে গতকাল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিইসিসহ চার কমিশনার। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সভা বর্জন করেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। প্রস্তাবিত আইনটি আগামী সপ্তাহে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় রাখা হয়নি সেনাবাহিনী’কে।
নির্বাচন ভবনে আরপিও সংশোধন সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো নুরুল হুদা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে সিইসির সভাপতিত্বে দু’দফা বৈঠক করে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে ইভিএম এর বিধান যুক্ত করে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বৈঠক বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার। বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-৭২ এর কিছু সংশোধনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়ে জাতীয় নির্বাচনে এই বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদে পাঠানোসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আইনটি সংশোধন হবে।

সিইসি জানান, মাহবুব তালুকদারের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকলেও কমিশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতের ভিত্তিতে সংস্কারের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিইসি আরো বলেন, উনি (মাহবুব তালুকদার) ভিন্নমত পোষণ করেছেন। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু, আমরা চারজন সম্মত হয়েছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ তৈরির জন্য এই সংশোধনী আনা হয়েছে।

তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা এ বিষয়ে কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইভিএম নিয়ে আইনে সংশোধনী আনা হবে। এটা নিয়ে আমরা একটা মেলা করবো। সবার মতামত নেবো। সেখানে পরিবেশ পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে তখন সিদ্ধান্ত হবে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যমে আমরা প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি। ২০১০ সালে ইভিএম চালু হয়। তবে এতদিন শুধু স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে এটি ব্যবহার করা হয়ে আসছে। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন।

সাংবাদিকরা এদিন এ বিষয়টি নজরে আনলে সিইসি বলেন, এভাবে বলা তার উচিত হয়নি। কারণ, আমি স্পষ্ট করে বলছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন আগে পাস হোক। সবার মতামত নেই। তখন যদি সম্ভব হয় একাদশে (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে দেখা যাবে। ইভিএম কেনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম কেনার বিষয়ে এখনো কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের নিজস্ব কিছু ইভিএম রয়েছে। আমরা সেগুলো দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চালাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত বছর অংশীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপে আলোচিত বিষয় ছিল ইভিএম। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল। ২৩টি দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছিল। এর মধ্যে বিএনপিসহ ১২টি দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সাতটি দল ইভিএমের পক্ষে।

তিনটি দল পরীক্ষামূলক ও আংশিকভাবে এবং একটি দল শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছিল। ইসি এতদিন বলে এসেছে, সব দল না চাইলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু এর মধ্যে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসিকে ইভিএম সরবরাহ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের অধীনে দেড় লাখ ইভিএম সংগ্রহ করতে চায় ইসি। অবশ্য ১৯শে আগস্ট এই প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=133101