৩১ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৪০

চিংড়ি রফতানি থমকে আছে বাগদা আর ভেনামির ঘোরে

বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হেক্টরপ্রতি তিন থেকে ছয় হাজার কেজি। অন্য দিকে ভেনামি বা সাদা চিংড়ি উৎপাদিত হয় ১০ থেকে ৩০ হাজার কেজি। ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী বাগদার স্থান দখল করে নিচ্ছে ভেনামি। চিংড়ির বিশ্ববাণিজ্যে ৭৭ শতাংশ অবদানই ভেনামির। বাগদার অবদান ১৩ শতাংশ। মোট ভেনামির ৭২ শতাংশই উৎপাদিত হয় এশিয়ায়। এশিয়ার সব দেশেই সাদা এই চিংড়ির উৎপাদন বেড়েই চলেছে, কমছে কেবল বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ, সরকার চায় না দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ হোক। অভিযোগ রয়েছে, কেবল রোগের কথা বলে ভেনামি চাষ বর্জন করা হয়েছে।

হিমায়িত চিংড়ি রফতানির চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশ থেকে রফতানি প্রতি বছরই কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের ৪৭ হাজার ৬৩৫ টন চিংড়ি রফতানি হলেও পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি হয় ৫১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪৪ হাজার ২৭৮ টন। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরো কমে রফতানি হয় ৪৭২ মিলিয়ন ডলারের ৪০ হাজার ২৭৬ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি কমে দাঁড়ায় ৪৪৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩৯ হাজার ৭০৬ টন। সর্বশেষ সদ্যবিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি কমে দাঁড়িয়েছে ৫০৮.৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে অনেক কম। অথচ এ সময়ে দেশের মোট রফতানি বেড়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর রফতানি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে প্রকৃত অর্জন তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর প্রাথমিক পণ্য খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। এখানে সবচেয়ে বড় আয় এসেছে তৈরী পোশাক খাত থেকে। এ খাতে এক বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ১৬ কোটি ডলার। এর বিপরীতে প্রকৃত অর্জন তিন হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। আর এই খাতে প্রবৃদ্ধি হলো ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছর তৈরী পোশাক খাতে আয় হয়েছিল দুই হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

চিংড়ি রফতানির এ করুণ অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে বাগদা চিংড়ির বাজার ছিল ১২ লাখ টন। নব্বই দশক থেকে প্যাসিফিক সাদা চিংড়ি বা ভেনামি চিংড়ির বাজার বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়া দণি এশিয়ার সব দেশে ভেনামি এই চিংড়ির চাষ হয়। আমাদের দেশে বাগদা চাষ আগে থেকে শুরু হলেও এর চাষ বাড়ানো যায়নি। ভেনামি চিংড়ির সম্ভাবনা এবং একরপ্রতি উৎপাদন অনেক বেশি হলেও সরকারের কাছ থেকে আমরা অনুমতি পাচ্ছি না।
বিশ্ববাজারে এখন বাগদার বাজার হারিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি ভেনামি চাষের জন্য। কিন্তু নানা অজুহাতে আজো অনুমতি পাইনি। কক্সবাজার, চকোরিয়া অথবা পাইকগাছায় কিছু জমি চেয়েছিলাম, সেটাও পাইনি। সরকার কেবল রোগের অজুহাত দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ চিংড়ি চাষে যদি রোগ হবে তাহলে ভারত কেন প্রতি বছর চাষ বাড়াচ্ছে? তার মতে, ভেনামি চিংড়ি চাষে খরচ ও দাম কম আর উৎপাদন বেশি হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। কাজেই বিশ্ববাজারে আবারো বাংলাদেশের অবস্থান পোক্ত করতে বাগদার পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি চাষ করা প্রয়োজন।

ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি না দেয়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশী বাদামি চিংড়ির চেয়ে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম। এ কারণে আমাদের উৎপাদনকারীরাও সাদা চিংড়ির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু ভেনামি চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে নানান সমস্যা আছে। এ চিংড়ি অধিক মাত্রায় রোগ ছড়ায়। তা ছাড়া একটা সময় ছিল তখন আমাদের বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন ভেনামি চিংড়ি চাষ করলে বাগদা হারিয়ে যাবে। তবে এ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। যেহেতু এ চিংড়ির উৎপাদন বেশি, বিশ্বে চাহিদাও বেশি। সরকারও তাই এটার চাষ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। এ জট সহসা খুলবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/344924